সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৩৫) থেকে একটি বিশেষ আয়াত রয়েছে:
"প্রত্যেক প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর আমি তোমাদের পরীক্ষা করব মন্দ ও ভাল দ্বারা এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।"
(সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৩৫)
সূরা আল-আম্বিয়া (সম্পূর্ণ সূরা)
সূরা আল-আম্বিয়া পবিত্র কোরআনের ২১তম সূরা, মক্কায় অবতীর্ণ এবং এতে ১১২টি আয়াত রয়েছে। এই সূরায় আল্লাহ বিভিন্ন নবী ও রাসূলের জীবনকথা উল্লেখ করেছেন, যাতে আমাদের জন্য শিক্ষা এবং উপদেশ রয়েছে। এখানে মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবিতা এবং আখিরাতের জবাবদিহিতার কথা।
মনে প্রশান্তি লাভের উপায়
১. আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা: বিশ্বাস করুন যে আল্লাহ আমাদের সব পরিস্থিতি জানেন এবং তিনিই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।
২. নামাজ ও দোয়া করা: নিয়মিত সালাত আদায় এবং কুরআন তিলাওয়াত করলে অন্তর প্রশান্ত হয়।
৩. সবর ও শোকর: জীবনের সকল পরীক্ষায় ধৈর্য ধরুন এবং আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন।
৪. আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া: পৃথিবীকে অস্থায়ী মনে করে আখিরাতের জন্য আমল করুন।
সূরা আল-আম্বিয়া (২১তম সূরা) বিস্তারিত বিবরণ
পরিচিতি
সূরা আল-আম্বিয়া একটি মক্কি সূরা। এর নামকরণ হয়েছে "আম্বিয়া" শব্দ থেকে, যার অর্থ "নবীগণ।" এটি নবীদের জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করে এবং মানুষকে এক আল্লাহর প্রতি ইমান আনার জন্য আহ্বান জানায়।
মূল বিষয়বস্তু
১. আখিরাতের স্মরণ
সূরার শুরুতেই মানুষকে আখিরাতের নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষ দুনিয়ার জীবনে মগ্ন থাকে, অথচ তাদের হিসাব-নিকাশের সময় অতি সন্নিকটে।
২. নবীগণের দৃষ্টান্ত
আল্লাহ বিভিন্ন নবীর ঘটনা উল্লেখ করেছেন, যেমন:
- নূহ (আ.): কিভাবে তিনি ধৈর্যের সাথে তার জাতিকে দাওয়াত দিয়েছেন।
- ইবরাহিম (আ.): মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম।
- দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.): তাদের জ্ঞান ও ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত।
- আইয়ুব (আ.): তার ধৈর্য ও আল্লাহর উপর আস্থা।
- ইউনুস (আ.): তার ভুল স্বীকার ও আল্লাহর দয়া লাভ।
৩. আল্লাহর কুদরত ও সৃষ্টিজগৎ
আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন ও ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে। পৃথিবী, আকাশমণ্ডল, এবং জীবনের প্রতিটি অংশ আল্লাহর নিখুঁত পরিকল্পনার প্রমাণ।
৪. মৃত্যু ও পুনরুত্থান
প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে আখিরাতে সকলকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে।
উল্লেখযোগ্য আয়াত
মৃত্যু সম্পর্কে:
"প্রত্যেক প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, এবং তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিফল দেওয়া হবে কিয়ামতের দিনে।" (আয়াত ৩৫)তওহিদের দাওয়াত:
"তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, সুতরাং তাঁরই ইবাদত করো।" (আয়াত ২৫)আল্লাহর দয়া:
"আমি দয়া করে তোমাদের কাছে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।" (আয়াত ১০)
সূরা থেকে শিক্ষা
১. আখিরাতের প্রস্তুতি: জীবনের প্রতিটি কাজ আখিরাতের উদ্দেশ্যে হওয়া উচিত।
২. সবর ও ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তা: নবীদের জীবনে ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের শিক্ষা রয়েছে।
৩. তওবা ও দোয়া: যেকোনো পাপ থেকে মুক্তির জন্য তওবা করতে হবে।
৪. আল্লাহর ক্ষমতার স্বীকৃতি: সৃষ্টিজগতের প্রতিটি জিনিস আল্লাহর নিদর্শন।
অন্তর প্রশান্তির জন্য কিছু আমল:
প্রতিদিন সূরা আল-আম্বিয়া থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করুন।
নিয়মিত দোয়া করুন:
"রাব্বি ইন্নি মাসসানিয়াদ্দুররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমীন।"
(হে আমার আল্লাহ! আমি কষ্টে নিপতিত হয়েছি, আর আপনি পরম দয়ালু।) — (আয়াত ৮৩, আইয়ুব (আ.)-এর দোয়া)আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করুন।
ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করুন।
মন্তব্যসমূহ