যারা তাদের রব্বকে ভয় করত তাদেরকে দলেদলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে তখন এর দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হবে। জান্নাতের দ্বাররক্ষীরা বলবে তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে। (৩৯:৭৩)
যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন মু’মিন-মুত্তাকীরা বলবে, “প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে অধিকারী করিয়েছেন এই ভূমির; আমরা জান্নাতে যেথায় ইচ্ছা বসবাস করব; সদাচারীদের পুরস্কার কত উত্তম” (৩৯:৭৪)।
এছাড়া বিভিন্ন হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত জান্নাতের বিভিন্ন দরজার (গেট বা বাবের) যে উল্লেখ পাওয়া যায় তা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে, সেই সাথে এসকল গেটগুলি বান্দার জন্য মর্যাদার বিশেষ প্রতীকও বটে। যেমন:
(১) বাব-আস সালাহ দিয়ে সালাত আদায়ে তৎপর মু’মিন-মুত্তাকীরা প্রবেশ করবে,
(২) বাব-আল জিহাদ দিয়ে দুনিয়ার জীবনে জিহাদে অংশগ্রহণকরীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে,
(৩) বাব-আস সাদাক্বাহ দিয়ে ঐসব ব্যক্তিবর্গ প্রবেশ করবে যারা দুনিয়াতে বেশী-বেশী দান ও সাদাক্বাহ করেছে,
(৪) বাব-আর রাইয়ান তাদের জন্য নির্দিষ্ট যারা নিয়মিত ফরয, সুন্নাত ও নফল সিয়াম পালনে তৎপর ছিল,
(৫) বাব-আল হাজ্জ তাদের জন্য যারা হজ্জ পালন করেছে,
(৬) বাব-আল কাজিমিন তাদের জন্য যারা ক্রোধ দমনকারী ও ক্ষমাকারী ছিল,
(৭) বাব-আল আইমান তাদের জন্য যারা নিজেদের যৌনাংগকে সংযত রেখেছিল এবং
(৮) বাব-আয যিকির জন্য যারা সদা যিকিরের মধ্যে তাদের জিহবা ও অন্তরকে সজীব রেখেছিল।
জান্নাতে প্রবেশের দৃশ্য এবং জান্নাতীদের সৌন্দর্য: প্রবেশের বর্ণনা সাহ্ল ইব্নে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার বা সাত লক্ষ লোক সম্মিলিতভাবে একে অপরের হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ না করা পর্যন্ত প্রথম ব্যক্তি প্রবেশ করবে না। তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত। তাদের মধ্যে পরস্পরে কোন বিরোধ ও হিংসা থাকবে না, তাদের অন্তর হবে একাত্মা। (বুখারী ও মুসলিম)।
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস; রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতীরা হবে কেশ-দাড়িহীন দেহবিশিষ্ট এবং সুরমা মণ্ডিত চোখ বিশিষ্ট। তাদের যৌবন নষ্ট হবে না এবং তাদের কাপড়ও জীর্ণ মলিন হবে না। তারা পরস্পরে ভাই ভাইয়ের মত মুখোমুখি আসনে উপবিষ্ট থাকবে ( তিরমিযী)।
বুখারী, মুসলিম ও ইব্নে মাজাহ্তে আরও একটি হাদিস আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিশ্চয় জান্নাতের দরজার পাটসমূহ থেকে দু’টি পাটের মধ্যবর্তী স্থান হবে মক্কা ও হাজর এবং হাজর ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানের সমান।
রেফারেন্স: আল-কুরআন (সূরা:আয়াত): ৩৯:৭৩-৭৪; আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: কিতাবু সিফাতিল জান্নাতী ওয়ান-নার, ৪র্থ খণ্ড, জুন ২০০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পৃষ্ঠা-৫৩০-৩২)।
হে আল্লাহ, তুমিই আমাদের একমাত্র রব্ব, তুমিই একমাত্র দানকারী; আমরা তোমারই নিকট চিরস্থায়ী জান্নাতের দারুস সালামের অফুরুন্ত নিয়ামত প্রার্থনা করছি।
মন্তব্যসমূহ