Skip to main content

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

 আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

আল্লাহ তালা তার বান্দাদেরকে অঢেল অনুকম্পায় ঢেকে রেখেছেন। জলে-স্থলে, তাদের শরীর ও পরিপার্শ্বে তথা সমগ্র পৃথিবীতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অসংখ্য নেয়ামত ছড়িয়ে দিয়েছেন তদের কল্যাণে। এরশাদ হয়েছে,

 ألم تروا أن الله سخر لكم ما في السموات وما في الأرض وأسبغ عليكم نعمه ظاهرة وباطنة سورة لقمان: 20

তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তালা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন , তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। [সূরা লুকমান:২০] আরো রশাদ হয়েছে -

 وآتاكم من كل ما سألتموه وإن تعدوا نعمة الله لا تحصوها إن الإنسان لظلوم كفارسورة إبراهيم: 34

যা তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত হিসেব করে দেখ, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। [সূরা ইব্রাহীম :৩৪

তবে বান্দার উপর সবচেয়ে বড় নিয়ামত, নবী-রসূল প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ নিয়ামতের দাবি হল -আল্লাহ তায়ালার প্রাপ্য হক-অধিকার বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন ও যথাযথভাবে তা প্রয়োগের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া। আল্লাহ তা‌আলার গুরুত্বপূর্ণ হক সমূহের একটি হল ঈমান যা মন্থিত হবে হৃদয়ের গভীরে এবং অভিব্যক্তি খোঁজে পাবে বাহ্যিক আচরণে।

আল্লাহ তালার প্রতি ঈমান চারটি বিষয়কে অর্ন্তভুক্ত করে-

প্রথমত: আল্লাহ তালার অস্তিত্বে বিশ্বাস — আল্লাহ আছেন, ছিলেন, থাকবেন। হৃদয়ের গভীরে কঠিনভাবে এ-বিশ্বাস পোষণ করার নামই আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস। এ-বিশ্বাস কোনো অলীক ধারণা প্রসূত নয় বরং এর পক্ষে রয়েছে অসংখ্য দলীল। উদাহরণত আল্লাহ তালার সৃষ্টিজগৎ, ও এতে সক্রিয় নিখুঁত পরিচালনা পদ্ধতি আল্লাহ তালার অস্তিত্ব নির্দেশক একটি বড় প্রমাণ। স্রষ্টা ছাড়া কোন কিছুই নিজেকে অস্তিত্বে আনতে পারে না। কেননা অস্তিত্বের পূর্বে প্রতিটি জিনিসই থাকে অবিদ্যমান। আর অবিদ্যমান জিনিসের পক্ষে সৃষ্টি করা কল্পনাতীত ব্যাপার। আকস্মিকভাবে কোনো কিছুর অস্তিত্বে আসাটাও অসম্ভব। কারণ সংগঠিত প্রতিটি বস্তু বা সম্পাদিত প্রতিটি কাজের একজন সংগঠক-সম্পাদনকারী থাকা জরুরি। সুতরাং এ-মহাবিশ্ব, ও এতে বিরাজমান বস্তুসামগ্রী স্বসৃষ্ট কোনো বিষয় হতে পারে না। অকস্মাৎ তৈরি হয়েও অস্তিত্বে আসেনি এগুলো। আসা সম্ভব নয়। তাই মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও পরিচালনার পেছনে একজন সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক রয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত পরিস্কার। সৃষ্টিজগৎ তার সমগ্র বিশালতা নিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ ঘোষণা করছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। স্রষ্টার অস্তিত্ব একটি অমোঘ বাস্তবতা। আর যা বাস্তব তা অস্বীকার করাই হল প্রবঞ্চনা। তাই মহাবিশ্বের কঠিন বাস্তবতার নিরেখেই আমরা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস রাখতে বাধ্য।

দ্বিতীয়ত: রুবুবিয়্যাতের প্রতি ঈমান —

অর্থাৎ সৃষ্টি, সৃষ্টির মালিকানা একমাত্র আল্লাহ তালার। তিনিই পরিচালক-প্রতিপালক। তিনি একাই আদেশ-নির্দেশের অধিপতি।

 ألا له الخلق والأمرسورة الأعراف : 54 

(শুনে রাখো, সৃষ্টি ও আদেশ একমাত্র তাঁরই কাজ) [আল আরাফ:৫৪]।  আরো রশাদ হয়েছে-

 ذلكم الله ربكم له الملك والذين تدعون من دونه ما يملكون من قطميرسورة فاطر : 13

ইনিই আল্লাহ! তোমাদের পালর্তা, সাম্রাজ্য তারই। তার পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আটিরও মালিক নয়।) (সূরা ফাতের:১৩)

আল্লাহ তালার রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে । তবে এমন অনেকেই আছে যারা জেদ ধরে অহঙ্কারবশত, নিজের কথায় আস্থা না রেখেও আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। যেমন- ফেরআউন তার সম্প্রদায়কে বলেছ-

  أنا ربكم الأعلىسورة النازعات : 38

আমিই তোমাদের সেরা পালনকর্তা। [সূরা নাযেআত:৩৮] সে আরো বলেছে,

يأيها الملأ ما علمت لكم من إله غيريسورة القصص: 38  

হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে।) [আল কাসাস:৩৮]

ফেরআউন নিজের উপর আস্থা নিয়ে কথাগুলো বলেনি, কারণ আল্লাহ তালা সূরা আন-নামলে বলেছেন,

 وجحدوا بها واستيقنتها أنفسهم ظلماً وعلواًسورة النمل :14

তারা অহংকারের বশবর্তী হয়ে নিদর্শনাবলী প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। [আন নামল:১৪] মূসা আ. ফেরআউনকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,

لقد علمت ما أنزل هؤلاء إلا رب السموات والأرض بصائر وإني لأظنك يا فرعون مثبوراً سورة الإسراء: 102

তুমি জান যে, আসমান ও জমিনের পালনকর্তাই এসব নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বরূপ নাযিল করেছেন। হে ফেরআউন, আমার ধারণা তুমি ধ্বংস হতে চলেছ [বনী ইসরাঈল:১০২]

এর দ্বারা প্রমাণিত হল, মুশরিকরা আল্লাহ তালার উলুহিয়্যাতের ব্যাপারে অংশীবাদী বিশ্বাস পোষণ করা সত্ত্বেও রুবুবিয়্যাতকে স্বীকার করে নিত নির্দ্বিধায়। আল্লাহ তালা বলেন-

 قل لمن الأرض ومن فيها إن كنتم تعلمون. سيقولون لله قل أفلا تذكرون. قل من رب السموات السبع ورب العرش العظيم. سيقولون لله قل أفلا تتقون. قل من بيده ملكوت كل شيء وهو يجير ولا يجارعليه إن كنتم تعلمون. سيقولون لله قل فأنى تسحرونسورة المؤمنون : 84-89

বলন! পৃথিবী ও এতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল। তারা বলবে, সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? বলুন! সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে? তারা বলবে, আল্লাহ । বলুন! তবুও কি তোমরা ভয় করবে না? বলুন! তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না। তারা বলবে আল্লাহর। বলুন! তাহলে কোথা থেকে তোমারেকে যাদু করা হচ্ছে?  [মুমেনূন:৮৪-৮৯] আরো রশাদ হয়েছে -

 ولئن سألتهم من خلق السموات والأرض ليقولون خلقهن العزيز العليم سورة الزخرف : 9

আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ। [সূরা যুখরুফ: ৯] অন্যত্র রশাদ হয়েছে-

 ولئن سألتهم من خلقهم ليقولون الله فأنى يؤفكونسورة الدخان : 87

আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে ? তবে অবশ্যই তারা বলবে আল্লাহ।  [আদ দুখান:৮৭]

তৃতীয়ত: আল্লাহ তালার উলুহিয়্যাতের প্রতি বিশ্বাস

অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তালাই সত্যিকারার্থে প্রভু। বিনয় ও মহব্বত সমন্বিত বাদতের উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া অন্য কেউ বাদতের উপযুক্ত নয়, হতে পারে না। এরশাদ হয়েছে -

 وإلهكم إله واحد لا إله إلا هو الرحمن الرحيمسورة البقرة : 163

আর তোমাদের ইলাহ অদ্বিতীয় ইলাহ। তিনি ভিন্ন অন্য কোনো উপাস্য নেই । তিনি করুণাময়, দয়ালু।  [ আল বাক্বারা:১৬৩]

আরো রশাদ হয়েছে -

أأرباب متفرقون خير أم الله الواحد القهار. ما تعبدون من دونه إلا أسماء سميتوها أنتم وآباءكم ما أنزل الله بها من سلطانسورة يوسف 39-40

পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ ? তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের বাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছ। আল্লাহ এদের ব্যাপারে কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি।) [ইউসুফ:৩৯-৪০]

প্রভুত্ব একমাত্র আল্লাহ তালার। এবাদতের পাত্র একমাত্র তিনিই। প্রভুত্বের ক্ষেত্রে যারা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার হিসেবে সাব্যস্ত করে তাদের ধারণা ভুল, অবাস্তব। যারা এ ভুল ধারণায় আরোপিত, অত্যন্ত জোরালো যুক্তিতে খন্ডন করা হয়েছে তাদের বিশ্বাস পবিত্র কোরআনের নানা জায়গায়। কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা হল-

১.মুশরিকরা যেসব বিষয়কে প্রভু মনে করে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, প্রভুত্বের কোনো বৈশিষ্ট্যই তাদের মধ্যে নেই। পবিত্র করআনে বিশ্লিষ্ট আকারে এ বক্তব্যর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো হয়েছে। যুক্তিগুলোর সারকথা হল, আল্লাহ ভিন্ন অন্যসব উপাস্য সৃষ্টির ক্ষমতা রাখেনা। কারও ইষ্ট-অনিষ্টের ক্ষমতা এদের নেই। রক্ষা অথবা ধ্বংস কোনো কিছুরই ক্ষমতা এদের নেই। এরা জীবন-মৃত্যুর মালিক নয়। আসমান-জমিনের কোন জিনিসের মালিক এরা নয় এবং এতে তাদের আদৌ কোনো অংশীদারিত্ব নেই। ইরশাদ হয়েছে-

واتخذوا من دونه آلهة لايخلقون شيئا وهم يخلقون. ولايملكون لأنفسهم ضراً ولا نفعاً ولايملكون موتاً ولاحياةً ولا نشوراًسورة الفرقان : 3

তারা আল্লাহ ব্যতীত অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং তারাই সৃষ্ট, নিজেদের কল্যাণ-অকল্যাণ এর মালিক তারা নয়। জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মালিক এরা নয়।  [আল ফুরকান-৩]আরো রশাদ হয়েছে-

 أيشركون ما لا يخلق شيئاً وهم يخلقون. ولا يستطيعون لهم نصراً ولا أنفسهم ينصرونسورة الأعراف : 191-192

তারা কি এমন কাউকে শরীক সাব্যস্ত করে যে একটি বস্তুও সৃষ্টি করেনি বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তারা না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজের সাহায্য করতে পারে। [আল আরাফ:১৯১-১৯২]

২.মুশরিকরা বিশ্বাস করত, আল্লাহ তালাই প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, তাঁর হাতেই সমস্ত জিনিসের মালিকানা, তিনি রক্ষা করেন এবং তাঁর অধিকারের বলয় থেকে কেউ পালাতে পারে না। রশাদ হয়েছে-

ولئن سألتهم من خلقهم ليقولون الله فانى يؤفكونسورة الدخان : 87

তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে ? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। (আদ্ দুখান:৮৭) আরো ‌রশাদ হয়েছে-

قل من يرزقكم من السماء والأرض أم من يملك السمع والأبصار. ومن يخرج الحي من الميت ويخرج الميت من الحي ومن يدبرالأمر. فسيقولون الله فقل أفلا تتقون (سورة يونس : 31)

আপনি জিজ্ঞাসা করুন, কে রুযি দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও জমিন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন? এবং কেই-বা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! আপনি বলুন, তার পরেও তোমরা ভয় করছ না? [ইউনুস:৩১]

অংশীবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধদের নিজেদের দেয়া স্বাক্ষীর ভিত্তিতেই তাদের উপর জরুরি হয়ে পড়ে যে একমাত্র আল্লাহকেই তারা প্রভু হিসেবে মানবে। একমাত্র তাঁরই ইবাদতে নিজেদেরকে আরোপিত করবে। নিছক ধারণাজাত প্রভু ও ইলাহের ইবাদত থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে আনবে যারা নিজেদেরই কোনো কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক নয়।

চর্তুথত:আল্লাহ তায়ালার নাম ও সিফাতের প্রতি বিশ্বাস

আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও এককতায় বিশ্বাসের পাশাপাশি তার সমস্ত নাম ও সিফাত (গুণমঞ্জরি) এর প্রতি বিশ্বাস সমান গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র করআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামের বিশুদ্ধ সুন্নায় আল্লাহ তালার যেসব নাম ও সিফাতের কথা এসেছে সে সবের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই মর্মে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো অপব্যাখ্যা, নিষ্ক্রিয়করণ, আকৃতি ও উপমা প্রদান ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে কঠিনভাবে । রশাদ হয়েছে-

 ولله الأسماء الحسنى فادعوه بها وذروا الذين يلحدون في أسمائه سيجزون ما كانوا يعملونسورة الأعراف : 180

আর আল্লাহর আছে সব উত্তম নাম। কাজেই সেগুলো দিয়েই তাঁকে ডাকো। আর তাদেরকে বর্জন করো, যারা তার নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে। [আল আরাফ-১৮০] অন্যত্র রশাদ হয়েছে -

ليس كمثله شيئ  وهو السميع البصيرسورة الشورى : 11

কোনো কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা , সর্বদ্রষ্টা । [আশ শুরা:১১]


ওয়েব গ্রন্থনা : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার / সার্বিক যত্ন : আবহাছ এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটি, বাংলাদেশ।

Comments

Popular posts from this blog

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য

  একগুচ্ছ মুক্তাদানা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি; তাঁর নিকট তাওবা করি; আর আমাদের নফসের সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই । আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই । আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল; তাঁর প্রতি অনেক সালাত (দরূদ) ও সালাম। অতঃপর: নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত দ্বীনে ইসলাম সকল ধর্ম ও জীবনব্যবস্থার চেয়ে পরিপূর্ণ, সর্বোত্তম ও সর্বমহান দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা। আর এই দ্বীনটি এমন সার্বিক সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতা, যথার্থতা, সম্প্রীতি, ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সার্বিক পরিপূর্ণতা এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ব্যাপকতার সাক্ষ্য বহন করে; আর তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এই সাক্ষ্য বহন করে যে, তিনি সত্যিকা

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য - 2

ঈমানের পরে ইসলামের বড় বড় বিধানসমূহ হল: সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন করা এবং সম্মানিত ঘরের হজ করা সে সম্পর্কে  শরীয়তের এই মহান বিধানসমূহ ও তার বিরাট উপকারিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। এই বিধিবিধানের দাবিস্বরূপ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা ও এর প্রতিদানস্বরূপ ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা নিয়েও চিন্তা করুন। ০ সালাতের মধ্যে যা আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন । এতে রয়েছে আল্লাহর জন্য ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা, তার প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ, প্রশংসা, দো‘আ ও প্রার্থনা, বিনয়। ঈমানের বৃক্ষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব বাগিচার ক্ষেত্রে পানি সেচ দেয়ার মতোই । দিনে ও রাতে যদি বার বার সালাতের ব্যবস্থা না থাকত , তবে ঈমান-বৃক্ষ শুকিয়ে যেত এবং তার কাঠ বিবর্ণ হয়ে যেত; কিন্তু সালাতের বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে ঈমান-বৃক্ষ বৃদ্ধি পায় এবং নতুনত্ব লাভ করে। এছাড়াও সালাতের অন্তর্ভুক্ত নানা বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করুন; যেমন: আল্লাহর যিকির ও স্মরণে মগ্ন থাকা— যা সব কিছুর চেয়ে মহান ও শ্রেষ্ঠ। কিংবা এ দিকে চিন্তা করুন: সালাত সকল প্রকার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। ০ এবার যা

জান্নাত হল একটি চিরস্থায়ী আবাসস্থল

যারা ঈমান আনে, আমলে সালিহা করে এবং সৎকর্মপরায়ণশীল, রব্বের প্রতি বিনয়াবনত, রব্বের ভয়ে ভীত, তারাই হলো আসহাবুল জান্নাত- জান্নাতের অধিবাসী, তারাই দাখিল হবে জান্নাতে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের রব্বের রহমত, সন্তোষ, সমুচ্চ মর্যাদা, জান্নাতে উত্তম সুউচ্চ প্রাসাদ, উন্নত কক্ষ ও নিরাপদ বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি।  তারাই হবে জান্নাতের উত্তম পবিত্র অধিবাসী, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে আছে তাদের জন্য চির সবুজ উদ্যান ও স্থায়ী সুখ-শান্তি, সেখানে নাই কোন ক্লেশ, নাই কোন ক্লান্তি, এটি হবে তাদের জন্য এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। থাকবে অপরিমিত জীবনোপকরণ, তারা যা কিছু কামনা করবে তাই পাবে, আর তা হবে তাদের রব্বের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ আপ্যায়ন। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেথায় আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না।  জান্নাতের দ্বার তাদের জন্য হবে উন্মুক্ত, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী, থাকবে সেথায় বহুবিধ ফলমূল ও পানীয়, আনতনয়না সমবয়স্কাগণ, অপরিমিত রিযিক, আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে জান্নাত হবে কত উৎকৃষ্ট! মুত্তাকীদের জন্য ইহাই মহাসাফল্য। যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের নির্ধারিত রিযিক ফলমূল, সেখানে তাদেরকে সম্মানিত

সূরা আল আলার ফজিলত

হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এই সূরা “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” কে ভালবাসতেন। (আহমদ) ব্যাখ্যা: হুজুর (সা.) সূরা আলাকে এই জন্য ভালবাসতেন যে, ঐ সূরার মধ্যে এই আয়াত রয়েছে: ” ইন্না- হাযা লাফিসসুহুফিল উলা- সুহুফি ইব্রাহীমা ওয়া মুসা-” আয়াতের অর্থ: এই সূরার সব বিষয়বস্ত অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (অর্থাৎ পরকাল উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী সহিফা সমূহেও লিখিত আছে। অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও মুসা (আ.) এর সহীফা সমূহের থেকে কোরআনুল কারীমের সত্যতা প্রমাণ, এবং ইহুদি ও খৃষ্টানদের ভ্রান্ত মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইব্রাহীমী সহিফার বিষয়বস্ত: হযরত আবু জর গিফারী (রা.) রাসূল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, ইব্রাহীম (আ.) এর সহীফা কীরূপ ছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এসব সহিফায় শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছিল। তন্মধ্যে এক দৃষ্টান্তে অত্যাচারী বাদশাকে সম্বোধন করা বলা হয়েছে “হে ভুঁইফোড় গর্বিত বাদশাহ!  আমি তোমাকে ধনেশ্বর স্তুপীকৃত করার জন্য রাজত্ব দান করিনি। বরং আমি তোমাকে এই জন্য শাসন ক্ষমতা অর্পণ করেছি, যাতে তুমি উৎপীড়িত বদদোয়া আমার পর্যন্ত পৌছতে না দাও। কেননা, আমার আইন এই যে, আমি উৎপীড়িত দোয়

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য - পর্ব-১

আল্লাহ তা ‘ আলা স্বীয় বান্দাদের জলে-স্থলে, শরীরে ও দিগন্ত জুড়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নি‘আমতরাজি দ্বারা আবৃত করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ﴿ أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗ ﴾ [لقمان: ٢٠] “তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা ‘ আলা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ?” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০] অন্যত্র বলেন , ﴿ وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤ ﴾ [ابراهيم: ٣٤] “যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি-ই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। আফসোস! মানুষ সীমাহীন অন্যায়পরায়ণ, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৪] ﴿ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨ ﴾ [النحل: ١٨] “যদি আল্লাহর নি ‘ আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ ক