Skip to main content

মহান আল্লাহ - তিনি বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত সত্তা


সর্বোজ্ঞ-প্রজ্ঞাময় আল্লাহ কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবেন এবং জান্নাতীদের সাথে কথা বলবেন; আল-কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আল্লাহর মুখ-চেহারা, হাত, পা, চোখ, কান, আঙ্গুল ও নাফস আছে; এসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে মুসলিমদের একটি দল বিশ্বাস করেন, যেহেতু আল্লাহকে দেখা যাবে সেহেতু আল্লাহর একটি নির্দিষ্ট আকার (Size) আছে; তাদের মতে “আকারযুক্ত বস্তু দেখা যায় এবং নিরাকার বস্তু দেখ যায় না”। তারা বলেন যে, আল্লাহর এই আকার তাঁর মহান জাতসত্তা ও মহান মর্যাদার সাথে শোভনীয় এবং মানানসই; তারা আরো বলেন যে, আল্লাহর আকার তাঁর সৃষ্ট কোন বস্তুর আকার ও আকৃতির মত নয়। “নিরাকার কোন বস্তুকে দেখা যায় না” এই ধারণার উপর ভিত্তির করেই মুসলিমেদের এই দলটি “আল্লাহর আকার আছে” এই বিশ্বাস লালন করেন। 

মুসলিমদের দ্বিতীয় দলটি মনে করেন যে “আল্লাহ নিরাকার অর্থাৎ আল্লাহর কোন আকার নেই”। আল্লাহর চেহারা-মুখ, হাত, পা, চোখ, কান, আঙ্গুল, নাফস ইত্যাদির যে বর্ণনা কুরআনে ও হাদীসে আছে তা মূলত আল্লাহর অনুপম শক্তির বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহর অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গের উল্লেখ করার সময় এই দ্বিতীয় দলটি এইভাবে বলেন যে, আল্লাহ‌র ক্বুদরতি হাত, ক্বুদরতি পা, ক্বুদরতি চোখ, ক্বুদরতি কান, ক্বুদরতি আঙ্গুল ইত্যাদি। 

এখানে ক্বুদরত শব্দের অর্থ হলো আল্লাহর শক্তি, সামর্থ্য, ক্ষমতা ও যোগ্যতা। এই দ্বিতীয় দলের মতে আল্লাহর মুখ-চেহারা, হাত, পা, চোখ, কান, আঙ্গুল ও নাফস এই সব বিশেষণ বিশ্বাস করার অর্থই তাঁকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা। তাদের বিশ্বাস শুধুমাত্র মানুষ বা অন্য যে কোন সৃষ্টিকে এই সকল বিশেষণ দ্বারা বিশেষিত করা যায়, আল্লাহকে নয়। তাদের মতে যেহেতু আল্লাহ বলেন “কোন কিছুই তাঁর মত নয় (৪২:১১)”, সেহেতু আল্লাহর ক্ষেত্রে এরূপ বিশেষণ আরোপ করা যাবে না। 

আল্লাহর ‘আকার অথবা নিরাকার’ এই ধারণা-কনসেপ্ট নিয়ে এই দুইদল মুসলিমদের মধ্যে তর্ক ও বিতর্ক প্রায় দেখা যায়। তারা নিজ নিজ মতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে অন্যকে গোমরাহ বলতে দ্বিধা বোধ করেন না। আল্লাহর আকার আছে অথবা আল্লাহ নিরাকার, এইটি ব্যাখ্যা করার পূর্বে বস্তু, পদার্থ, ভর, মৌল বা অবস্তুর আকার বা নিরাকারের যে ধারণা ও তথ্য বিদ্যমান, তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। বস্তু, পদার্থ, ভর, মৌল বা অবস্তুকে প্রধানত নিম্নের কয়েকটি অবস্থায় বিদ্যমান:  

(ক) বস্তুর প্রথম অবস্থা: কঠিন বস্তু: এই ধরণের বস্তুর আকার (Size) ও আকৃতি (Safe) আছে; এধরণের বস্তুর দৈর্ঘ (Length), প্রস্থ-প্রসার-চওড়া (Breadth), উচ্চতা (Heigth), ঘনত্ব (Density) আছে। এটি সাধারণত কঠিন-শক্ত, জায়গা দখল করে; এটি দেখা যায়, ধরা যায়, এটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং এর ওজন আছে; যেমন ইট, পাথর, টেবিল, চেয়ার, বাড়ি, গাড়ি, লোহা, সোনা, রূপা, মানুষ, গাছ ইত্যাদি। এই ধরণের বস্তুর সাথে মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞাতা সবচেয়ে বেশী।

(খ) বস্তুর দ্বিতীয় অবস্থা: তরল বস্তু: এই ধরণের বস্তুর কোন আকার (Size) ও আকৃতি (Safe) নেই, এটি নিরাকার; তবে এর আয়তন (Volume) ও ঘনত্ব (Density) আছে; এটি কঠিন-শক্ত নয়, এটি তরল, যে পাত্রে রাখা যাবে সে পাত্রের আকার ধারণ করে, জায়গা দখল করে, এটি দেখা যায় কিন্তু সাধারণ অর্থে এটি ধরা যায় না, এটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং এর ওজন আছে; যেমন পানি, তেল, পেট্রোল, মধু ইত্যাদি। পৃথিবীতে চার ভাগের তিন ভাগই পানি। এই পানি নিয়েই মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞাতাও অনেক অনেক বেশী। 

(গ) বস্তুর তৃতীয় অবস্থা: বায়োবীয় বস্তু: এই ধরণের বস্তুর কোন আকার (Size) ও আকৃতি (Safe) নেই, এটি নিরাকার; তবে এর আয়তন (Volume) ও ঘনত্ব (Density) আছে; এটি কঠিন-শক্ত নয়, এটি বায়ু-বাতাস জাতীয়, জায়গা দখল করে, ওজন আছে কিন্তু এটি দেখা যায় না, ধরাও যায় না, তবে অনুভব করা যায়, এটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং এর ওজন আছে। যেমন বায়ু, অক্সিজেন, ইত্যাদি। পৃথিবীর উপরিভাগ বায়ু দ্বারা আবৃত; বায়ু ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না; এই বায়ু নিয়েই মানুষের অভিজ্ঞাতাও সবচেয়ে বেশী।  

বস্তু-পদার্থ সাধারণত কঠিন, তরল ও বায়বীয় এই তিন অবস্থায় বিদ্যমান। এই কঠিন, তরল ও বায়ুবীয় পদার্থই আল্লাহর সৃষ্ট। কঠিন পদার্থের আকার (Size), আকৃতি (Safe) ও ঘনত্ব (Density) আছে। অন্যদিকে তরল ও বায়ুবীয় পদার্থের শুধুই আয়তন (Volume) ও ঘনত্ব (Density) আছে কিন্তু কোন  আকার (Size) ও আকৃতি (Safe) নেই, এটি নিরাকার।  

(ঘ) আল্লাহর অভিনব সৃষ্টি  যা অস্তিত্বে বিদ্যমান: সময় (time), আলো (light), অন্ধকার (darkness), আগুন (fire), ঠাণ্ডা (cold), তাপ (heat), শব্দ (sound), বিদ্যুৎ (electricity), চুম্বক (magnet) ও বিভিন্ন ধরণের শক্তি (different form energy): এগুলো আল্লাহ্‌র এমন এক অভিনব সৃষ্টি  যা অস্তিত্বে বিদ্যমান; যার মধ্যে বস্তুর কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থার কোন বৈশিষ্ট্য নেই (No size, no safe, no volume, no density); ধরা যায় না; ছোঁয়া যায় না; এগুলি বায়ু জাতীয় নয়, এগুলির কোন আকার-আকৃতি নেই, এগুলি প্রধানত নিরাকার; মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা এগুলো সাধারণত আকর্ষিত হয় না।

(ঙ) মানুষের চিন্তা, কল্পনা, স্মৃতি, বুদ্ধি, অনুভূতি ও নাফ্‌স এগুলো নিরাকার: এগুলো শুধু অনুভব করার বিষয়; আল্লাহই এদের স্রষ্টা। ফিরিশতা, জিন, বিশ্বজাহানসহ সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এর দুয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে, কিছু আছে আকার ও আকৃতি বিশিষ্ট, আর কিছু আছে নিরাকার; আল্লাহই এদের স্রষ্টা। আল্লাহর বিশ্বজাহানে এমন অনেক কিছু সৃষ্টি আছে যা মানুষের অজানা; এদের আকার, আকৃতি ও নিরাকারের কোন ধারণায় মানুষের নেই। মহাপরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাবান, সর্বজ্ঞ, আল্লাহই এদের স্রষ্টা। মু’মিন সর্বান্তকরণে শুধুই বিশ্বাস করবে এ সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ।  

(চ) চাঁদ ও সূর্যের সৃষ্টি তত্ত্ব: সৃষ্টি তত্ত্বের দিক দিয়ে চাঁদ গোলাকার দৃশ্যমান, আকার বিশিষ্ট বস্তু; অন্যদিকে সূর্য গোলাকার দৃশ্যমান, নিরাকার গ্যাসীয় বস্তু। আলো ও আগুন হলো দৃশ্যমান নিরাকার; অন্যদিকে তাপ, ঠাণ্ডা, শব্দ, শক্তি, সময় ইত্যাদি হলো নিরাকার। আল্লাহ বলেন: “লাইসা কামিস্‌লিহি শাইয়ুং অর্থাৎ কোন কিছুই তাঁর মত - তাঁর সদৃশ নয় (৪২:১১)”। উক্ত আয়াতে এটি প্রতীয়মান যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট আকার ও আকৃতি বিশিষ্ট কোন বস্তু বা মৌল উপাদান নন; কিংবা নন তিনি তাঁর সৃষ্ট কোন নিরাকার বিশিষ্ট বস্তু; কিংবা নন তিনি তাঁর সৃষ্ট দৃশ্যমান বা অদৃশ্য নিরাকার বিশিষ্ট কোন সত্তা।  

(ছ) আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু না বলা যে বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান নেই: “আল্লাহর আকার আছে, নাকি তিনি নিরাকার বিশিষ্ট কোন সত্তা” এই বিষয়ের উপর আল্লাহ মানুষের নিকট কোন সনদ পাঠান নি। তাই এমন একটি বিষয় যা একমাত্র আল্লাহর জ্ঞানের আওতাধীন সে বিষয় সম্পর্কে কোন মুসলিমের এভাবে বলা সংগত নয় যে আল্লাহর আকার আছে, অথবা আল্লাহ নিরাকার, অথবা আল্লাহর অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গগুলো তাঁর কুদরত, শক্তি ও ক্ষমতা? আল্লাহর ঘোষণা: তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই (১০:৬৮)। ইমাম আবু হানিফা (রাহি.) এর মতে এভাবে বিশ্বাস করা ও মুখে বলার অর্থ আল্লাহর এসকল বিশেষণকে অস্বীকার ও বাতিল করা যা কাদেরিয়া ও মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস। (আল-ফিকহুল আকবর: ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর) ৷

(জ) আশরাফুল মাখলুকাত - মানুষের সকল কিছু সীমিত: মানুষের মধ্যে রয়েছে আকার, আকৃতি, দেহ ও অস্থি; রয়েছে নাফ্‌স, চিন্তা, কল্পনা, স্মৃতি, বুদ্ধি ও অনুভূতির মত নিরাকারের অস্তিত্ব; আর এই অদ্ভুত সমন্বয়ের মাধ্যমে মানুষ হয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত। কিন্তু সীমিত চিন্তা, কল্পনা, স্মৃতি, বুদ্ধি ও অনুভূতি নিয়ে মানুষের পক্ষে আল্লাহকে তাঁরই সৃষ্ট আকার ও নিরাকারের বেড়াজালে আবদ্ধ করা সঙ্গত নয়। 

(ঝ) এড়িয়ে চল আল্লাহ সম্পর্কে সকল কিছু বিতর্ক: মু’মিন ও মুসলিমগণ অধিক সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে “আকার ও নিরাকার” শব্দ দুটি মহান আল্লাহর শানে যুক্ত করা থেকে বিরত থাকবে; এড়িয়ে যাবে আকার ও নিরাকার সম্পর্কিত সকল প্রকার বিতর্ক; রক্ষা করবে নিজেকে আল্লাহর আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক হয় এমন সব চিন্তা, চেতনা, ভাবনা, অনুমান, বিশ্বাস, কথা এবং কাজ থেকে। 

(ঞ) আল্লাহ ভীতি ও তাকওয়ার নীতি অক্ষুণ্ণ রেখে মু’মিন-মুসলিম বিশ্বাস করবে: আল্লাহর যে সকল অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গের উল্লেখ কুরআন ও হাদীসে আছে সেগুলো মহান আল্লাহর জাতসত্তা, তাঁর মহান মর্যাদা-ইজ্জতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, শোভনীয় এবং মানানসই। মু’মিন বিশ্বাস করবে আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট কোন আকার ও নিরাকার বিশিষ্ট কোন বস্তু-অবস্তু, মৌল-অমৌলের মত নয় এবং কোন কিছুই আল্লাহর সদৃশ নয়। 

Comments

Popular posts from this blog

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য

  একগুচ্ছ মুক্তাদানা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি; তাঁর নিকট তাওবা করি; আর আমাদের নফসের সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই । আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই । আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল; তাঁর প্রতি অনেক সালাত (দরূদ) ও সালাম। অতঃপর: নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত দ্বীনে ইসলাম সকল ধর্ম ও জীবনব্যবস্থার চেয়ে পরিপূর্ণ, সর্বোত্তম ও সর্বমহান দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা। আর এই দ্বীনটি এমন সার্বিক সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতা, যথার্থতা, সম্প্রীতি, ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সার্বিক পরিপূর্ণতা এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ব্যাপকতার সাক্ষ্য বহন করে; আর তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এই সাক্ষ্য বহন করে যে, তিনি সত্যিকা

জান্নাত হল একটি চিরস্থায়ী আবাসস্থল

যারা ঈমান আনে, আমলে সালিহা করে এবং সৎকর্মপরায়ণশীল, রব্বের প্রতি বিনয়াবনত, রব্বের ভয়ে ভীত, তারাই হলো আসহাবুল জান্নাত- জান্নাতের অধিবাসী, তারাই দাখিল হবে জান্নাতে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের রব্বের রহমত, সন্তোষ, সমুচ্চ মর্যাদা, জান্নাতে উত্তম সুউচ্চ প্রাসাদ, উন্নত কক্ষ ও নিরাপদ বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি।  তারাই হবে জান্নাতের উত্তম পবিত্র অধিবাসী, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে আছে তাদের জন্য চির সবুজ উদ্যান ও স্থায়ী সুখ-শান্তি, সেখানে নাই কোন ক্লেশ, নাই কোন ক্লান্তি, এটি হবে তাদের জন্য এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। থাকবে অপরিমিত জীবনোপকরণ, তারা যা কিছু কামনা করবে তাই পাবে, আর তা হবে তাদের রব্বের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ আপ্যায়ন। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেথায় আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না।  জান্নাতের দ্বার তাদের জন্য হবে উন্মুক্ত, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী, থাকবে সেথায় বহুবিধ ফলমূল ও পানীয়, আনতনয়না সমবয়স্কাগণ, অপরিমিত রিযিক, আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে জান্নাত হবে কত উৎকৃষ্ট! মুত্তাকীদের জন্য ইহাই মহাসাফল্য। যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের নির্ধারিত রিযিক ফলমূল, সেখানে তাদেরকে সম্মানিত

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য - 2

ঈমানের পরে ইসলামের বড় বড় বিধানসমূহ হল: সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন করা এবং সম্মানিত ঘরের হজ করা সে সম্পর্কে  শরীয়তের এই মহান বিধানসমূহ ও তার বিরাট উপকারিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। এই বিধিবিধানের দাবিস্বরূপ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা ও এর প্রতিদানস্বরূপ ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা নিয়েও চিন্তা করুন। ০ সালাতের মধ্যে যা আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন । এতে রয়েছে আল্লাহর জন্য ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা, তার প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ, প্রশংসা, দো‘আ ও প্রার্থনা, বিনয়। ঈমানের বৃক্ষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব বাগিচার ক্ষেত্রে পানি সেচ দেয়ার মতোই । দিনে ও রাতে যদি বার বার সালাতের ব্যবস্থা না থাকত , তবে ঈমান-বৃক্ষ শুকিয়ে যেত এবং তার কাঠ বিবর্ণ হয়ে যেত; কিন্তু সালাতের বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে ঈমান-বৃক্ষ বৃদ্ধি পায় এবং নতুনত্ব লাভ করে। এছাড়াও সালাতের অন্তর্ভুক্ত নানা বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করুন; যেমন: আল্লাহর যিকির ও স্মরণে মগ্ন থাকা— যা সব কিছুর চেয়ে মহান ও শ্রেষ্ঠ। কিংবা এ দিকে চিন্তা করুন: সালাত সকল প্রকার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। ০ এবার যা

সূরা আল আলার ফজিলত

হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এই সূরা “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” কে ভালবাসতেন। (আহমদ) ব্যাখ্যা: হুজুর (সা.) সূরা আলাকে এই জন্য ভালবাসতেন যে, ঐ সূরার মধ্যে এই আয়াত রয়েছে: ” ইন্না- হাযা লাফিসসুহুফিল উলা- সুহুফি ইব্রাহীমা ওয়া মুসা-” আয়াতের অর্থ: এই সূরার সব বিষয়বস্ত অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (অর্থাৎ পরকাল উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী সহিফা সমূহেও লিখিত আছে। অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও মুসা (আ.) এর সহীফা সমূহের থেকে কোরআনুল কারীমের সত্যতা প্রমাণ, এবং ইহুদি ও খৃষ্টানদের ভ্রান্ত মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইব্রাহীমী সহিফার বিষয়বস্ত: হযরত আবু জর গিফারী (রা.) রাসূল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, ইব্রাহীম (আ.) এর সহীফা কীরূপ ছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এসব সহিফায় শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছিল। তন্মধ্যে এক দৃষ্টান্তে অত্যাচারী বাদশাকে সম্বোধন করা বলা হয়েছে “হে ভুঁইফোড় গর্বিত বাদশাহ!  আমি তোমাকে ধনেশ্বর স্তুপীকৃত করার জন্য রাজত্ব দান করিনি। বরং আমি তোমাকে এই জন্য শাসন ক্ষমতা অর্পণ করেছি, যাতে তুমি উৎপীড়িত বদদোয়া আমার পর্যন্ত পৌছতে না দাও। কেননা, আমার আইন এই যে, আমি উৎপীড়িত দোয়

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য - পর্ব-১

আল্লাহ তা ‘ আলা স্বীয় বান্দাদের জলে-স্থলে, শরীরে ও দিগন্ত জুড়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নি‘আমতরাজি দ্বারা আবৃত করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ﴿ أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗ ﴾ [لقمان: ٢٠] “তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা ‘ আলা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ?” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০] অন্যত্র বলেন , ﴿ وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤ ﴾ [ابراهيم: ٣٤] “যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি-ই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। আফসোস! মানুষ সীমাহীন অন্যায়পরায়ণ, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৪] ﴿ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨ ﴾ [النحل: ١٨] “যদি আল্লাহর নি ‘ আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ ক

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

  আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আল্লাহ তা আ লা তার বান্দাদেরকে অঢেল অনুকম্পায় ঢেকে রেখেছেন। জলে-স্থলে, তাদের শরীর ও পরিপার্শ্বে তথা সমগ্র পৃথিবীতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অসংখ্য নেয়ামত ছড়িয়ে দিয়েছেন তদের কল্যাণে। এরশাদ হয়েছে,   ألم تروا أن الله سخر لكم ما في السموات وما في الأرض وأسبغ عليكم نعمه ظاهرة وباطن ة  .  سورة لقمان: 20 তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা আ লা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন , তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ন ি য়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।   [সূরা লুকমান:২০] আরো  ই রশাদ হয়েছে -   وآتاكم من كل ما سألتموه وإن تعدوا نعمة الله لا تحصوها إن الإنسان لظلوم كفار .  سورة إبراهيم: 34 যা তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত হিসেব করে দেখ, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। [সূরা ইব্রাহীম :৩৪ তবে বান্দার উপর সবচেয়ে বড় ন ি য়ামত, নবী-রসূল প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ ন ি য়ামতের দাবি হল -আল্লাহ তায়ালার প্রাপ্য হক-অধিকার বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন ও যথাযথভাবে তা প্রয়ো