Skip to main content

কবরের ফিতনা দ্বারা কী উদ্দেশ্য

কবরের ফিতনা দ্বারা কী উদ্দেশ্য? কবরের আজাব এবং কবরের ফিতনা কি ভিন্ন? কারা এই ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে?

ফিতনা (فتنة) শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। 

যেমন: পরীক্ষা, দাঙ্গা, গোলযোগ, বিপদ, কষ্ট, পরীক্ষা, সম্মোহন ও আকর্ষণ ইত্যাদি। [ডা. ফজলুর রাহমান রচিত আরবী-বাংলা অভিধান]

তবে কুরআন-হাদিসে পরীক্ষা অর্থে ‘ফিতনা’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিকে ‘ফিতনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। যেমন:

আল্লাহ তাআলা বলেন,


وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ

“আর জেনে রেখো যে, নিঃসন্দেহে তোমাদের ধনদৌলত ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।” [সূরা আনফাল: ২৮]

 ইবনে কাসির রাহ. ফিতনা শব্দের অর্থ করতে গিয়ে বলেন, أي : اختبار وامتحان منه لكم অর্থাৎ পরীক্ষা করা, যাচায় বা পরখ করা। মহান আল্লাহ তোমাদেরকে এগুলো দিয়েছেন যেন তিনি জানতে পারেন যে, তোমরা এসব পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর ও তার আনুগত্য কর না কি এগুলোতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে তার থেকে দূরে সরে পড়।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]

 আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

  وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً

“আর আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দিয়ে পরীক্ষা করি।” [সূরা আন্বিয়া: ৩৫]

এ সব ক্ষেত্রে ফিতনা অর্থ: পরীক্ষা। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা এসব জিনিস দ্বারা বান্দাকে পরীক্ষা করতে চান। তারপর দেখতে চান, কারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় আর কারা ব্যর্থ হয়।

(যদিও কুরআনে অন্য অর্থেও এর ব্যাবহার রয়েছে)

 ঠিক তদ্রূপ ‘কবরের ফিতনা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কবরের পরীক্ষা। শাইখ বিন বায রহ. বলেন,

الفتنة في القبور معناها الابتلاء والامتحان 

“কবরের ফেতনা অর্থ: কবরের পরীক্ষা।”

 অর্থাৎ আল্লাহর দু জন ফেরেশতা বিশেষ কিছু ব্যক্তি ছাড়া (যেমন: শহিদ, মুসলিম দেশের সীমান্ত প্রহরী মুজাহিদ প্রমুখ) কবরে সকল মানুষের পরীক্ষা নিবেন। এ কারণে হাদিসে এ দুজন ফেরেশতাকে فتان (ফাত্তান) বা পরীক্ষক ফেরেশতা নামে অবহিত করা হয়েছে। সেখানে তারা কবর বাসীদেরকে তিনটি প্রশ্ন করবেন।

(যেগুলো নিম্নোক্ত হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে) যারা সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে হবে তারা সফলকাম এবং সৌভাগ্যবান। আর যারা পারবে না তারা ব্যর্থ ও হতভাগ্য।

 পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরকে মহা পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। আর তা হল, তাদের কবরের সাথে জান্নাতের সংযোগ স্থাপন করা হবে। তারা সেখানে জান্নাতের নিয়ামতরাজি উপভোগ করবেন কিয়ামত পর্যন্ত। 

আর অকৃতকার্যরা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। ফেরেশতাগণ তাদের উপর কঠিন আজাব (শাস্তি) প্রয়োগ শুরু করবেন। জাহান্নামের সাথে তাদের কবরের সংযোগ স্থাপন করা হবে। সেখানে তারা কিয়ামত পর্যন্ত কঠিন আজাবের মধ্যে কালাতিপাত করবে। এ ব্যাপারে হাদিসে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে।

 সুতরাং বুঝা গেল, ‘কবরের ফিতনা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কবরের পরীক্ষা তথা দু জন ফেরেশতা কর্তৃক কবর বাসীদেরকে প্রশ্ন করা আর কবরের আজাব হল, সেখানকার শাস্তি। যারা এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে তারা কবরের আজাবের সম্মুখীন হবে আর যারা সফল হবে তা হতে রক্ষা পাবে। (আল্লাহর নিকট কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই)

 

❑ কবরে প্রশ্ন সংক্রান্ত হাদিস:

 

নিম্নে কবর নামক পরীক্ষার হলের প্রশ্ন সম্পর্কিত দুটি হাদিস পেশ করা হল: (যা আগেই ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে) 

◈ প্রথম হাদিস:

 

আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنْ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنْ الْجَنَّةِ فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا قَالَ قَتَادَةُ وَذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ قَالَ وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ

“বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দু জন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং  প্রশ্ন করেন,

এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তুমি কী বলতে?

 তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্‌র বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে তাকাও। আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন। তখন সে দু’টি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে দেখবে।

 কাতাদাহ রাহ. বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি (কাতাদাহ) পুনরায় আনাস রা.-এর হাদিসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি [(আনাস) (রাঃ)] বলেন, “আর মুনাফিক বা কাফির ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে, তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কী বলতে?”

সে উত্তরে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই বললাম। 

 তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে যে, এতে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দু জাতি (মানুষ ও জিন) ছাড়া তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে।” [সহীহ বুখারি, অধ্যায়: ২৩/ জানাজা, পরিচ্ছেদ: ২৩/৮৬. কবরের আজাব সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে]

 এ হাদিসে কেবল একটি প্রশ্নের কথা এসেছে। তবে অন্য হাদিসে তিনটি প্রশ্নের কথা বর্ণিত হয়েছে।  

 ◈ ২য় হাদিস: (একটি লম্বা হাদিসের অংশ বিশেষ)

 «فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَه:ُ مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاء:ِ أَنْ صَدَقَ عَبْدِي، فَافْرِشُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ، قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا، وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ

“অতঃপর তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এরপর তার নিকট দু জন ফেরেশতা আগমন করে তাকে উঠিয়ে বসাবে। অতঃপর বলবে:

তোমার রব কে? 

সে বলবে: আল্লাহ।

তোমার দ্বীন কি? 

সে বলবে: আমার দ্বীন ইসলাম। 

এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে (নবী হিসেবে) প্রেরিত হয়েছিল? 

সে বলবে: তিনি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। 

 অতঃপর তারা বলবে: কীভাবে জানলে? সে বলবে: আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি ও তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। 

 অতঃপর এক ঘোষণাকারী আসমানে ঘোষণা দিবে: আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। 

তিনি বলেন: ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে।” [আহমদ ১৮৫৩৪, ইবনে আবি শায়বাহ্ ১২০৫৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৬৭৬০ সহীহ]

 ❑ আল্লাহর পথের যুদ্ধরত অবস্থায় শাহাদত বরণকারী এবং মুসলিম দেশের সীমান্ত প্রহরী মুজাহিদগণ কবরের প্রশ্নের সম্মুখীন হবে না:

 এ সংক্রান্ত তিনটি হাদিসে পেশ করা হল:


✪ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন,


عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا بَالُ الْمُؤْمِنِينَ يُفْتَنُونَ فِي قُبُورِهِمْ إِلاَّ الشَّهِيدَ قَالَ ‏ "‏ كَفَى بِبَارِقَةِ السُّيُوفِ عَلَى رَأْسِهِ فِتْنَةً ‏"‏ 

হে আল্লাহর রাসূল! শহীদ ব্যতীত অন্যান্য মুমিনগণ কবরের ফিতনার সম্মুখীন হবে এর কারণ কি? তিনি বললেন, তার মাথার উপর উজ্জ্বল তরবারি তাকে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদ রাখবে।

 [সুনান আন-নাসায়ী, অধ্যায়: ২১/ জানাজা, পরিচ্ছেদ: ১১২/ শহীদ সহীহ। আল-আহকাম ৩৬, আত-তা'লীকুর রাগীব ২/১৯৭]

 

✪ সালমান ফারেসী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,

 

«رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ وَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الْفَتَّانَ»


“আল্লাহর পথে একদিন বা একরাত সীমানা পাহারা দেয়া, একমাসের সওম পালন ও সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর ঐ প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তবে তার কৃতকর্মের এ পুণ্য ‘আমলের সাওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিযক (জান্নাত হতে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা হতে মুক্তি পাবে। [সহিহ মুসলিম]

 

✪ অন্য হাদিসে এসেছে, ফাদালাহ ইবনে উবাইদ রা. সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


 كُلُّ الْمَيِّتِ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلَّا الْمُرَابِطَ، فَإِنَّهُ يَنْمُو لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَيُؤَمَّنُ مِنْ فَتَّانِ الْقَبْرِ


“প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তার আমল শেষ হয়ে যায় কিন্তু সীমান্ত প্রহরায় সাওয়াব বন্ধ হয় না। কিয়ামত পর্যন্ত তার আমলের সাওয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।” [সুনান আবু দাউদ (তাহকিক কৃত), অধ্যায়:  ৯/ জিহাদ, পরিচ্ছদ: ১৬. সীমান্ত পাহারা দেয়ার ফযিলত-সহিহ] 

কতিপয় আলেম বলেন, নবী-রাসূলগণকেও কবরে এই তিনটি প্রশ্ন করা হবে না। কেননা, তাদের উম্মতদেরকে তাদের সম্পর্কেই প্রশ্ন করা হবে। 

মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে বেঁচে থাকা অবস্থায় কবরের প্রশ্ন সমূহের উত্তর দেওয়ার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করেন এবং কবরের ভয়াবহ আজাব থেকে রক্ষা করেন৷ আমিন।

🔖আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি; দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব



Comments

Popular posts from this blog

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য

  একগুচ্ছ মুক্তাদানা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি; তাঁর নিকট তাওবা করি; আর আমাদের নফসের সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই । আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই । আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল; তাঁর প্রতি অনেক সালাত (দরূদ) ও সালাম। অতঃপর: নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত দ্বীনে ইসলাম সকল ধর্ম ও জীবনব্যবস্থার চেয়ে পরিপূর্ণ, সর্বোত্তম ও সর্বমহান দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা। আর এই দ্বীনটি এমন সার্বিক সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতা, যথার্থতা, সম্প্রীতি, ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সার্বিক পরিপূর্ণতা এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ব্যাপকতার সাক্ষ্য বহন করে; আর তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এই সাক্ষ্য বহন করে যে, তিনি সত্যিকা

জান্নাত হল একটি চিরস্থায়ী আবাসস্থল

যারা ঈমান আনে, আমলে সালিহা করে এবং সৎকর্মপরায়ণশীল, রব্বের প্রতি বিনয়াবনত, রব্বের ভয়ে ভীত, তারাই হলো আসহাবুল জান্নাত- জান্নাতের অধিবাসী, তারাই দাখিল হবে জান্নাতে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের রব্বের রহমত, সন্তোষ, সমুচ্চ মর্যাদা, জান্নাতে উত্তম সুউচ্চ প্রাসাদ, উন্নত কক্ষ ও নিরাপদ বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি।  তারাই হবে জান্নাতের উত্তম পবিত্র অধিবাসী, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে আছে তাদের জন্য চির সবুজ উদ্যান ও স্থায়ী সুখ-শান্তি, সেখানে নাই কোন ক্লেশ, নাই কোন ক্লান্তি, এটি হবে তাদের জন্য এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। থাকবে অপরিমিত জীবনোপকরণ, তারা যা কিছু কামনা করবে তাই পাবে, আর তা হবে তাদের রব্বের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ আপ্যায়ন। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেথায় আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না।  জান্নাতের দ্বার তাদের জন্য হবে উন্মুক্ত, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী, থাকবে সেথায় বহুবিধ ফলমূল ও পানীয়, আনতনয়না সমবয়স্কাগণ, অপরিমিত রিযিক, আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে জান্নাত হবে কত উৎকৃষ্ট! মুত্তাকীদের জন্য ইহাই মহাসাফল্য। যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের নির্ধারিত রিযিক ফলমূল, সেখানে তাদেরকে সম্মানিত

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য - 2

ঈমানের পরে ইসলামের বড় বড় বিধানসমূহ হল: সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন করা এবং সম্মানিত ঘরের হজ করা সে সম্পর্কে  শরীয়তের এই মহান বিধানসমূহ ও তার বিরাট উপকারিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। এই বিধিবিধানের দাবিস্বরূপ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা ও এর প্রতিদানস্বরূপ ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা নিয়েও চিন্তা করুন। ০ সালাতের মধ্যে যা আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন । এতে রয়েছে আল্লাহর জন্য ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা, তার প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ, প্রশংসা, দো‘আ ও প্রার্থনা, বিনয়। ঈমানের বৃক্ষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব বাগিচার ক্ষেত্রে পানি সেচ দেয়ার মতোই । দিনে ও রাতে যদি বার বার সালাতের ব্যবস্থা না থাকত , তবে ঈমান-বৃক্ষ শুকিয়ে যেত এবং তার কাঠ বিবর্ণ হয়ে যেত; কিন্তু সালাতের বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে ঈমান-বৃক্ষ বৃদ্ধি পায় এবং নতুনত্ব লাভ করে। এছাড়াও সালাতের অন্তর্ভুক্ত নানা বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করুন; যেমন: আল্লাহর যিকির ও স্মরণে মগ্ন থাকা— যা সব কিছুর চেয়ে মহান ও শ্রেষ্ঠ। কিংবা এ দিকে চিন্তা করুন: সালাত সকল প্রকার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। ০ এবার যা

সূরা আল আলার ফজিলত

হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এই সূরা “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” কে ভালবাসতেন। (আহমদ) ব্যাখ্যা: হুজুর (সা.) সূরা আলাকে এই জন্য ভালবাসতেন যে, ঐ সূরার মধ্যে এই আয়াত রয়েছে: ” ইন্না- হাযা লাফিসসুহুফিল উলা- সুহুফি ইব্রাহীমা ওয়া মুসা-” আয়াতের অর্থ: এই সূরার সব বিষয়বস্ত অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (অর্থাৎ পরকাল উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী সহিফা সমূহেও লিখিত আছে। অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও মুসা (আ.) এর সহীফা সমূহের থেকে কোরআনুল কারীমের সত্যতা প্রমাণ, এবং ইহুদি ও খৃষ্টানদের ভ্রান্ত মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইব্রাহীমী সহিফার বিষয়বস্ত: হযরত আবু জর গিফারী (রা.) রাসূল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, ইব্রাহীম (আ.) এর সহীফা কীরূপ ছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এসব সহিফায় শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছিল। তন্মধ্যে এক দৃষ্টান্তে অত্যাচারী বাদশাকে সম্বোধন করা বলা হয়েছে “হে ভুঁইফোড় গর্বিত বাদশাহ!  আমি তোমাকে ধনেশ্বর স্তুপীকৃত করার জন্য রাজত্ব দান করিনি। বরং আমি তোমাকে এই জন্য শাসন ক্ষমতা অর্পণ করেছি, যাতে তুমি উৎপীড়িত বদদোয়া আমার পর্যন্ত পৌছতে না দাও। কেননা, আমার আইন এই যে, আমি উৎপীড়িত দোয়

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য - পর্ব-১

আল্লাহ তা ‘ আলা স্বীয় বান্দাদের জলে-স্থলে, শরীরে ও দিগন্ত জুড়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নি‘আমতরাজি দ্বারা আবৃত করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ﴿ أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗ ﴾ [لقمان: ٢٠] “তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা ‘ আলা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ?” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০] অন্যত্র বলেন , ﴿ وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤ ﴾ [ابراهيم: ٣٤] “যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি-ই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। আফসোস! মানুষ সীমাহীন অন্যায়পরায়ণ, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৪] ﴿ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨ ﴾ [النحل: ١٨] “যদি আল্লাহর নি ‘ আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ ক

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

  আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আল্লাহ তা আ লা তার বান্দাদেরকে অঢেল অনুকম্পায় ঢেকে রেখেছেন। জলে-স্থলে, তাদের শরীর ও পরিপার্শ্বে তথা সমগ্র পৃথিবীতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অসংখ্য নেয়ামত ছড়িয়ে দিয়েছেন তদের কল্যাণে। এরশাদ হয়েছে,   ألم تروا أن الله سخر لكم ما في السموات وما في الأرض وأسبغ عليكم نعمه ظاهرة وباطن ة  .  سورة لقمان: 20 তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা আ লা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন , তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ন ি য়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।   [সূরা লুকমান:২০] আরো  ই রশাদ হয়েছে -   وآتاكم من كل ما سألتموه وإن تعدوا نعمة الله لا تحصوها إن الإنسان لظلوم كفار .  سورة إبراهيم: 34 যা তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত হিসেব করে দেখ, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। [সূরা ইব্রাহীম :৩৪ তবে বান্দার উপর সবচেয়ে বড় ন ি য়ামত, নবী-রসূল প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ ন ি য়ামতের দাবি হল -আল্লাহ তায়ালার প্রাপ্য হক-অধিকার বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন ও যথাযথভাবে তা প্রয়ো