Skip to main content

আস-সালাত: আল-কুরআনে ও হাদীসে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত


ইসলামের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি ও প্রথম ফরয হলো ঈমানের ঘোষণা দেওয়া; দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হলো ইসলামের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি ও দ্বিতীয় ফরয। নির্ধারিত সময়ে সালাত ক্বায়েম করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য (৪:১০৩)। আল-কুরআন এবং হাদীস থেকে প্রমাণিত যে দিনে-রাতে নির্ধারিত সময়ে মোট পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। এই নির্ধারিত সময় হলো ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং ঈশা।  

যে সব আমলে-সালিহার (নেক আমলের) জন্য জান্নাত প্রদানের ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে সালাত হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। মু’মিনগণ যে সব কারণে সফলতা লাভ করবে এবং জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিকারী হবে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো সালাত; সালাতে বিনয়, নম্র, খশু ও খজু হওয়া (২৩:২); সালাতে যত্নবান হওয়া (২৩:৯; ৭০:৩৪) এবং সালাতে সদা প্রতিষ্ঠিত-ক্বায়েম থাকার (৭০:২৩) মাধ্যমে একজন সালাত ক্বায়েমকারী সকল প্রকার অশ্লীল-ফাহিশা ও মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে (২৯:৪৫)”। 

আল-কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিবরণ:

আল্লাহর নির্দেশ-১: “তুমি সালাত ক্বায়েম করো দিবসের দুই প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংশে (১১:১১৪)”। এই আয়াতে দিবসের প্রথম প্রান্তভাগে ফজরের সালাত, দ্বিতীয় প্রান্তভাগে যোহর ও আসরের সালাত; এবং রাতের প্রথমাংশে হলো মাগরিব ও ইশার সালাত; এই আয়াতে মোট পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। 

আল্লাহর নির্দেশ-২: “তুমি সালাত ক্বায়েম করবে সূর্য হেলে যাবার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত এবং ক্বায়েম করবে ফজরের কুরআন পাঠও; কারণ ফজরের কুরআন পাঠ সাক্ষী স্বরূপ (১৭:৭৮)”। এই আয়াতে সূর্য হেলে যাবার পর যোহর ও আসর সালাত; রাতের ঘন অন্ধকার হলো মাগরিব এবং ইশার সালাত; এই আয়াতে ফজরে কুরআন পাঠ ‘কুরআনাল ফাজরে’ এই শব্দদ্বয়ের উল্লেখ করে ফজরের সালতের কথা বুঝানো হয়েছে।

আল্লাহর নির্দেশ-৩: তোমরা সকল সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের (সালাতিল উসত্বা) এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াও (২:২৩৮)। হাদীসের প্রমাণ অনুসারে অধিকাংশ গবেষক আলেমের মতে মধ্যবর্তী সালাত (সালাতিল উসত্বা) হচ্ছে আসরের সালাত। রাসুল (সা.) এর হাদীস দ্বারা এটা নির্দিষ্ট, যাতে খন্দকের যুদ্ধের দিন তিনি ‘সালাতিল উসত্বা’ বলতে আসরের সালাতকে অভিহিত করেছেন (বুখারী-২৯৩১; মুসলিম-৬২৭)।

আল্লাহর নির্দেশ-৪: “সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ করো সে বিষয়ের উপর যা তারা বলে; তোমার রব্বের প্রশংসা সহকারে তাসবীহ (পবিত্রতা) ঘোষণা করো সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে এবং রাত্রিকালে তাসবীহ (পবিত্রতা) ঘোষণা করো এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পারো (২০:১৩০)”। 

আল্লাহর বাণী: অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর সে বিষয়ের উপর যা তারা বলে এবং তোমার রব্বের প্রশংসা সহকারে তাসবীহ (পবিত্রতা) ঘোষণা কর  সূর্যদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে (৫০:৩৯)। 

উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে ‘সাব্বিহ বিহাম্‌দি’ অর্থ রব্বের প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ঘোষণা করতে বলা হয়েছে দিন-রাতের নির্দিষ্ট সময়ে এবং তাঁর প্রশংসা সহকারে তাসবীহ (পবিত্রতা) ঘোষণা করার গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো সালাত ক্বায়েম, কুরআন তিওয়াত, কুরআন অধ্যায়ন, দোআ, যিকির, তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল, তাকবীর এবং অন্যান্য নফল সকল ইবাদত পালন করা।

আল্লাহর প্রশংসা সহকারে নির্দিষ্ট সময়ে তাসবীহ (পবিত্রতা) ঘোষণা করার মাধ্যে সালাতের সময়ের প্রতি পরিষ্কার ইশারা করা রয়েছে। এই আয়াতে সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজর সালাত; সূর্যাস্তের পূর্বে তাসবীহ অর্থ আসর সালাত; রাত্রিকালের তাসবীহ বলতে মাগরিব ও ইশার সালাত বুঝানো হয়েছে। দিবসের প্রান্তগুলোতে তাসবীহ অর্থ একটি হলো প্রভাত যা ফজরের সালাত ইঙ্গিত করে; দিবসের দ্বিতীয় প্রান্ত হলো সূর্য পশ্চিমে হেলে যাবার পর যোহর সালাত ইঙ্গিত করে এবং তৃতীয় প্রান্ত হলো সন্ধ্যা যেখানে মাগরিবের সালাত নির্দেশ করে। এই আয়াতে তাসবীহসহ সালাতের পাঁচটি ওয়াক্তের কথা বলা হয়েছে। 

  আল্লাহর নির্দেশ-৫: “সুতরাং তোমরা আল্লাহর তাসবীহ (পবিত্রতা) ঘোষণা করো সন্ধ্যায় ও প্রভাতে এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়ে; আর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে সকল প্রশংসা তো তাঁরই (৩০:১৭-১৮)”। এই আয়াতদ্বয়ে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই তাসবীহ ঘোষণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সালাত ক্বায়েম, কুরআন তিওয়াত, কুরআন অধ্যায়ন, দোআ, যিকির, তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল, তাকবীর এবং অন্যান্য নফল সকল ইবাদত। এই আয়াতদ্বয়ে সন্ধ্যায় বলতে মাগরিব ও ঈশার সালাত; প্রভাত বলতে ফযরের সালাত; অপরাহ্ন বলতে আসরের সালাত এবং যোহর বলতে যোহরের সালাত।

আল্লাহর নির্দেশ-৬: “আমরা নিয়োজিত করেছিলাম পর্বতমালাকে, যেন এরা সকাল-সন্ধ্যায় তার (দাউদ আ.) সাথে আমার তাসবীহ (পবিত্রতা) ঘোষণা করে (৩৮:১৮)”। এখানে সকাল বলতে ফজর এবং সন্ধ্যা বলতে মাগরিব ও ঈশার সালাত।  

আল্লাহর নির্দেশ-৭: “হে মু’মিনগণ, তোমাদের মালিকানা দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিন সময় অনুমতি গ্রহণ করে; ফজরের সালাতের পূর্বে, যোহরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ তখন এবং ঈশার সালাতের পরে; এই তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময় (২৪:৫৮)”। এই আয়াতে তিনটি সালাতের সময়ের উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহর নির্দেশ-৮: “আর তুমি তোমার রব্বকে যিকির (স্মরণ) কর তোমার নাফস দিয়ে (মনে মনে) সবিনয়ে, সশংকচিত্তে এবং অনুচ্চস্বরে, সকাল ও সন্ধায়; আর তুমি হবে না উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত (৭:২০৫)”। এই যিকির (স্মরণ) করার অর্থ সালাত এবং অন্যান্য যিকির তথা তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ, কুরআন তিওয়াত, দোয়া ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা বলতে সুনির্দিষ্টভাবে দুটি সময়ে ফজরের  এবং মাগরিবের সালাতকে বুঝানো হয়েছে। 

হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত: হাদীসের প্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুসারে রাসুল (সা.) মিরাজ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রাপ্ত হন। রাসুল (সা.) তাঁর সকল সাহাবি (রা.)-দের নিয়ে মদীনার জীবনে পাঁচ অয়াক্ত সালাত ক্বায়েম করেন এই মর্মে ছয়টি প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থসহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহর বিবরণ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) থেকে সাহাবি (রা.); সাহাবি (রা.) থেকে তাবেঈ (রাহি.); তাবেঈ থেকে তাবে-তাবেঈ; তাবে-তাবেঈ থেকে বিভিন্ন সময় পরিক্রম করে বর্তমানে আমারা এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পেয়েছি এবং তা ক্বায়েম করে চলেছি। আল্লাহ সকলের প্রতি রহম বর্ষণ করুন।    সারসংক্ষেপ: আল-কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর এইসব বাণী তথা আয়াতসমূহের মাধ্যমে এবং তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ (সা.)-এর সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাতই মুসলিমদের জন্য ফরজ। আর এই সালাতের নির্দিষ্ট সময় হলো ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং ঈশা। আহলি সুন্নাত ওয়াল জামাত - সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারীগণ কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উপরই অবিচল সেই নবীর (সা.) যুগ থেকে। 

এর বিপরীতে আল-কুরআনে তিন ওয়াক্ত সালাতের বিবরণ আছে বলে মুসলিম নামধারী একটি দল একপ্রকার প্রপাগান্ডা চালিয়ে সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করছে; আল-কুরআন এবং হাদীসের আলোকে তাদের এই দাবি সর্বতভাবে মিথ্যা; এই দাবির পক্ষে তাদের কোনই ভিত্তি নেই; উপরোন্ত যারা তিন ওয়াক্ত সালাতের প্রপাগান্ডা চালান, তারা রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করেন না; অনুসরণ করেন না তাঁর শিক্ষা, হাদীস, সুন্নাহ এবং তাঁর আদর্শকে। 

অথচ আল-কুরআনে বলা হয়েছে “তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য কর (৩:১৩২; ৫:৯২; ২৪:৫৬; ৪৭:৩৩) এবং “তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আর্দশ (৩৩:২১)”। এই সব অকাট্ট হুকুমের বিপরীতে কেউ যদি রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা, হাদীস, সুন্নাহ এবং আদর্শকে ইচ্ছাকৃতভবে বাতিল করে, তবে সে অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাবে; আর এই মুসলিম কোন ধরণের মুসলিম বলে বিবেচিত হবে তা আল্লাহই জানেন; আল্লাহ সর্বজ্ঞ।        

আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী পূণ্য আছে সালাত ক্বায়েমের মধ্যে; আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার অন্যতম মাধ্যম হলো সালাত; আল্লাহর নির্দেশ, বান্দা যেন সালাতের প্রতি যত্নবান হয়; যারা সালাত ক্বায়েম করে, যারা সালাতের মধ্যেই তাদের রব্বের নিকট সকল প্রকার সাহায্যের আবেদন করে তাদের জন্য রয়েছে তাদের রব্বের পক্ষ থেকে পুরস্কার। মুসলিম জাতির পিতা ইব্‌রাহীম (আ.)-এর দোয়ার (১৪:৪০) সাথে দোয়া মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই: 

হে আমাদের রব্ব, তুমি আমাদেরকে সালাত ক্বায়েমকারী কর এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের রব্ব, তুমি আমাদের দোয়াকে কবুল কর ।

Comments

Popular posts from this blog

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য

  একগুচ্ছ মুক্তাদানা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি; তাঁর নিকট তাওবা করি; আর আমাদের নফসের সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই । আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই । আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল; তাঁর প্রতি অনেক সালাত (দরূদ) ও সালাম। অতঃপর: নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত দ্বীনে ইসলাম সকল ধর্ম ও জীবনব্যবস্থার চেয়ে পরিপূর্ণ, সর্বোত্তম ও সর্বমহান দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা। আর এই দ্বীনটি এমন সার্বিক সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতা, যথার্থতা, সম্প্রীতি, ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সার্বিক পরিপূর্ণতা এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ব্যাপকতার সাক্ষ্য বহন করে; আর তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এই সাক্ষ্য বহন করে যে, তিনি সত্যিকা

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য - 2

ঈমানের পরে ইসলামের বড় বড় বিধানসমূহ হল: সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন করা এবং সম্মানিত ঘরের হজ করা সে সম্পর্কে  শরীয়তের এই মহান বিধানসমূহ ও তার বিরাট উপকারিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। এই বিধিবিধানের দাবিস্বরূপ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা ও এর প্রতিদানস্বরূপ ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা নিয়েও চিন্তা করুন। ০ সালাতের মধ্যে যা আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন । এতে রয়েছে আল্লাহর জন্য ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা, তার প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ, প্রশংসা, দো‘আ ও প্রার্থনা, বিনয়। ঈমানের বৃক্ষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব বাগিচার ক্ষেত্রে পানি সেচ দেয়ার মতোই । দিনে ও রাতে যদি বার বার সালাতের ব্যবস্থা না থাকত , তবে ঈমান-বৃক্ষ শুকিয়ে যেত এবং তার কাঠ বিবর্ণ হয়ে যেত; কিন্তু সালাতের বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে ঈমান-বৃক্ষ বৃদ্ধি পায় এবং নতুনত্ব লাভ করে। এছাড়াও সালাতের অন্তর্ভুক্ত নানা বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করুন; যেমন: আল্লাহর যিকির ও স্মরণে মগ্ন থাকা— যা সব কিছুর চেয়ে মহান ও শ্রেষ্ঠ। কিংবা এ দিকে চিন্তা করুন: সালাত সকল প্রকার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। ০ এবার যা

জান্নাত হল একটি চিরস্থায়ী আবাসস্থল

যারা ঈমান আনে, আমলে সালিহা করে এবং সৎকর্মপরায়ণশীল, রব্বের প্রতি বিনয়াবনত, রব্বের ভয়ে ভীত, তারাই হলো আসহাবুল জান্নাত- জান্নাতের অধিবাসী, তারাই দাখিল হবে জান্নাতে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের রব্বের রহমত, সন্তোষ, সমুচ্চ মর্যাদা, জান্নাতে উত্তম সুউচ্চ প্রাসাদ, উন্নত কক্ষ ও নিরাপদ বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি।  তারাই হবে জান্নাতের উত্তম পবিত্র অধিবাসী, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে আছে তাদের জন্য চির সবুজ উদ্যান ও স্থায়ী সুখ-শান্তি, সেখানে নাই কোন ক্লেশ, নাই কোন ক্লান্তি, এটি হবে তাদের জন্য এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। থাকবে অপরিমিত জীবনোপকরণ, তারা যা কিছু কামনা করবে তাই পাবে, আর তা হবে তাদের রব্বের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ আপ্যায়ন। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেথায় আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না।  জান্নাতের দ্বার তাদের জন্য হবে উন্মুক্ত, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী, থাকবে সেথায় বহুবিধ ফলমূল ও পানীয়, আনতনয়না সমবয়স্কাগণ, অপরিমিত রিযিক, আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে জান্নাত হবে কত উৎকৃষ্ট! মুত্তাকীদের জন্য ইহাই মহাসাফল্য। যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের নির্ধারিত রিযিক ফলমূল, সেখানে তাদেরকে সম্মানিত

সূরা আল আলার ফজিলত

হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এই সূরা “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” কে ভালবাসতেন। (আহমদ) ব্যাখ্যা: হুজুর (সা.) সূরা আলাকে এই জন্য ভালবাসতেন যে, ঐ সূরার মধ্যে এই আয়াত রয়েছে: ” ইন্না- হাযা লাফিসসুহুফিল উলা- সুহুফি ইব্রাহীমা ওয়া মুসা-” আয়াতের অর্থ: এই সূরার সব বিষয়বস্ত অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (অর্থাৎ পরকাল উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী সহিফা সমূহেও লিখিত আছে। অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও মুসা (আ.) এর সহীফা সমূহের থেকে কোরআনুল কারীমের সত্যতা প্রমাণ, এবং ইহুদি ও খৃষ্টানদের ভ্রান্ত মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইব্রাহীমী সহিফার বিষয়বস্ত: হযরত আবু জর গিফারী (রা.) রাসূল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, ইব্রাহীম (আ.) এর সহীফা কীরূপ ছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এসব সহিফায় শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছিল। তন্মধ্যে এক দৃষ্টান্তে অত্যাচারী বাদশাকে সম্বোধন করা বলা হয়েছে “হে ভুঁইফোড় গর্বিত বাদশাহ!  আমি তোমাকে ধনেশ্বর স্তুপীকৃত করার জন্য রাজত্ব দান করিনি। বরং আমি তোমাকে এই জন্য শাসন ক্ষমতা অর্পণ করেছি, যাতে তুমি উৎপীড়িত বদদোয়া আমার পর্যন্ত পৌছতে না দাও। কেননা, আমার আইন এই যে, আমি উৎপীড়িত দোয়

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য - পর্ব-১

আল্লাহ তা ‘ আলা স্বীয় বান্দাদের জলে-স্থলে, শরীরে ও দিগন্ত জুড়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নি‘আমতরাজি দ্বারা আবৃত করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ﴿ أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗ ﴾ [لقمان: ٢٠] “তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা ‘ আলা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ?” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০] অন্যত্র বলেন , ﴿ وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤ ﴾ [ابراهيم: ٣٤] “যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি-ই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। আফসোস! মানুষ সীমাহীন অন্যায়পরায়ণ, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৪] ﴿ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨ ﴾ [النحل: ١٨] “যদি আল্লাহর নি ‘ আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ ক

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

  আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আল্লাহ তা আ লা তার বান্দাদেরকে অঢেল অনুকম্পায় ঢেকে রেখেছেন। জলে-স্থলে, তাদের শরীর ও পরিপার্শ্বে তথা সমগ্র পৃথিবীতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অসংখ্য নেয়ামত ছড়িয়ে দিয়েছেন তদের কল্যাণে। এরশাদ হয়েছে,   ألم تروا أن الله سخر لكم ما في السموات وما في الأرض وأسبغ عليكم نعمه ظاهرة وباطن ة  .  سورة لقمان: 20 তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা আ লা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন , তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ন ি য়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।   [সূরা লুকমান:২০] আরো  ই রশাদ হয়েছে -   وآتاكم من كل ما سألتموه وإن تعدوا نعمة الله لا تحصوها إن الإنسان لظلوم كفار .  سورة إبراهيم: 34 যা তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত হিসেব করে দেখ, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। [সূরা ইব্রাহীম :৩৪ তবে বান্দার উপর সবচেয়ে বড় ন ি য়ামত, নবী-রসূল প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ ন ি য়ামতের দাবি হল -আল্লাহ তায়ালার প্রাপ্য হক-অধিকার বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন ও যথাযথভাবে তা প্রয়ো