আ’রাফ - জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে উঁচ্চু প্রাচীর সমস্থান: আ’রাফ হচ্ছে একটি উঁচ্চু প্রাচীর সমস্থান যা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে পর্দা হিসাবে থাকবে। আ’রাফে যে সব লোক থাকবে তারা একে অপরকে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তখনও তারা জান্নাতে বা জাহান্নামে প্রবেশ করেনি। আ’রাফবাসীরা জান্নাতবাসীদের দেখবে এবং সম্বোধন করে বলবে, ‘তোমাদের উপর সালাম’।
এই আ’রাফবাসীরা তখনো জান্নাতের প্রবেশ করেনি বটে, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশের আকাঙ্ক্ষা করবে। যখন আ’রাফবাসীদের দৃষ্টি জাহান্নামবাসীদের প্রতি ফিরিয়ে দেওয়া হবে তখন তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব্ব, আমাদেরকে জাহান্নামের এই যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গী করো না’।
আ’রাফবাসীগণ জাহান্নামে যে সব লোকদিগকে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে তাদেরকে সম্বোধন করে বলবে: “তোমাদের সঞ্চিত ধন-সম্পদ, লোক-লস্কর, আত্মীয়-স্বজন, চাকর-বাকরের দল এবং তোমাদের ঔদ্ধত্য ও অহংকার তোমাদের কোন কাজে আসে নি।
হে জাহান্নামীরা তোমরাই তো কসম করে মু’মিনদের সম্বন্ধে বলতে যে, তাদের নিকট আল্লাহ্র রহ্মত পৌঁছবেনা। অথচ আজ এই বিচার দিনে মু’মিনদেরকেই বলা হবে, তোমারা প্রবেশ কর জান্নাতে, সেখানে না আছে তোমাদের কোন ভয়, আর না আছে কোন দুঃখ (৭:৪৬-৪৯)”।
সাদা-কালো রঙ মিশ্রিত ভেড়ার আকৃতিতে মৃত্যুর উপস্থিতি: আবূ সাঈদ খুদ্রী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিনে মৃত্যুকে একটি সাদা-কালো রঙ মিশ্রিত ভেড়ার আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে।
জান্নাতীদের প্রতি ঘোষণা: একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, হে জান্নাতীগণ, তখন তারা মাথা উঁচিয়ে তাকাবে। ঘোষণাকারী বলবে, তোমরা কি চিনতে পেরেছ এটা কি? তারা বলবে, হ্যাঁ; এটা মৃত্যু। তারা সকলেই এটা দেখেছে।
জাহান্নামীদের প্রতি ঘোষণা: এরপর একজন ঘোষণাকারী ডেকে বলবে, হে জাহান্নামীগণ, তখন তারা মাথা উঁচিয়ে তাকাবে। ঘোষণাকারী বলবে, তোমরা কি চিনতে পেরেছ, এটা কি? তারা বলবে, হ্যাঁ; এটা মৃত্যু। তারা সকলেই এটা দেখেছে।
মৃত্যুকে যবায় করা হবে: এরপর জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে মৃত্যুকে যবাই করা হবে। তারপর ঘোষণাকারী বলবে, হে জান্নাতবাসীগণ, মৃত্যুহীন চির আবাস (জান্নাত)। হে জাহান্নামীগণ, মৃত্যুহীন চির আবাস (জাহান্নাম)।
তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তিলাওয়াত করলেন: “(وَ أَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَ هُمْ فِيْ غَفْلَةٍ وَ هُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ), তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে সতর্ক করে দিন, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। এখন তারা গাফিল (অর্থাৎ তারা দুনিয়ার জীবনে গাফিল) এবং তারা (বিচার দিবস) বিশ্বাস করে না (১৯:৩৯)”।
এ বলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পবিত্র হাত দ্বারা দুনিয়ার প্রতি ইশারা করলেন। যার অর্থ হল এই দুনিয়া হল মানুষের জন্য একমাত্র প্রতারণা ও ছলনাময় ভোগ ব্যতীত স্থান ছাড়া কিছুই নয়। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ ও তিরমীযি)।
আ’রাফে মৃত্যুকে যবে্হ করার বর্ণনা: বুখারীতে আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রা.) এবং আবূ হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: “যখন জান্নাতীগণ জান্নাতে আর জাহান্নামীগণ জাহান্নামে চলে যাবে, তখন মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে আ’রাফে অর্থাৎ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে।
এরপর মৃত্যুকে যবে্হ করা হবে, একজন ঘোষণাকারী এই মর্মে ঘোষণা করবে যে, হে জান্নাতীগণ, এখন আর কোন মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামীগণ, এখন আর কোন মৃত্যু নেই। এ হচ্ছে চিরন্তন জীবন’।
তখন জান্নাতীগণের আনন্দ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। আর জাহান্নামীদের বিষণ্ণতাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে”। পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং আযাবপ্রাপ্ত প্রত্যেকেই যে অবস্থায় আছে তারা সে অবস্থায় চিরকাল থাকবে।
দুনিয়ার নেক আমলের জন্য জান্নাতের উত্তরাধিকারী হওয়ার গৌরব অর্জন: আবূ সাঈদ খুদ্রী ও আবূ হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবী কারীম (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন একজন ঘোষক ঘোষণা করবে:
নিশ্চয় তোমরা সুস্থ থাকবে, কখনও অসুস্থ হবে না। তোমরা জীবিত থাকবে কখনও মৃত্যুমুখে পতিত হবে না। তোমরা চিরযুবক থাকবে কখনও জরাগ্রস্থ হবে না। তোমরা সৌভাগ্যবান থাকবে কখনও ভাগ্যবিড়ম্বিত হবে না।
আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া-তা’য়ালার বাণীর অর্থ: “(وَ نُوْدُواۤ أَنْ تِلْكُمْ الْجَنَّةُ أُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كْنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ), এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, তোমরা যে সব নেক আমল করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে (৭:৪৩)”। (মুসলিম ও তিরমীযি)।
রেফারেন্স: বুখারী শরীফ, ১০/৬১০৫, ১০/৬১০১, ১০/৬১০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৯১-৯৩৷ আত্-তারগীব ওয়াত্ তারহীব, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা অধ্যায়, ৪র্থ খণ্ড, জুন ২০০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা- ৪৪৮ এবং ৬১০।
হে আল্লাহ, তুমিই আমাদের একমাত্র রব্ব, তুমিই একমাত্র দানকারী; আমরা তোমারই নিকট চিরস্থায়ী জান্নাতের ফিরদাউসের অফুরুন্ত নিয়ামত প্রার্থনা করছি।
মন্তব্যসমূহ