জান্নাতী ও আল্লাহর মাঝে কোন অন্তরায় থাকবে না: জারীর ইব্ন আব্দুল্লাহ্ (রা.), আব্দুল্লাহ্ ইব্ন কায়স (রা.) এবং সুহাইব ইব্ন সিনান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তাদেরকে ডেকে বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগণ, আল্লাহ্র নিকট তোমাদের প্রতিশ্রুতি একটা নিয়ামত রয়েছে, যা তোমরা এখন দেখনি।
জান্নাতীরা তখন বলবে, সেটি কী? হে আমাদের রব্ব, আপনি তো আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করেছেন, আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং আমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করেছেন। এরপর হিজাব বা পর্দা উঠে যাবে, তারা মহান আল্লাহ্কে দেখতে থাকবে।
এই সময় জান্নাতী এবং আল্লাহ্র মাঝে তাঁর মহিমার চাদর ব্যতীত আর কোন অন্তরায় থাকবে না। জান্নাতীরা আল্লাহকে দেখবে। আল্লাহ্র কসম, মহান আল্লাহ্ জান্নাতীদেরকে যত নিয়ামত দিয়েছেন, তার মধ্যে এটি হবে তাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয়-পছন্দের।
অপর বর্ণনায় এসেছে: আল্লাহ্র দিদার বা আল্লাহ্কে দেখা অপেক্ষা অধিক প্রিয় তাদের নিকট আর কিছুই হবে না। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরআনুল কারীম থেকে এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, (لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُواْ الْحُسْنٰي وَ زِيَادَةٌ) ‘যারা কল্যাণময় কাজ করে, তাদের জন্যে আছে মঙ্গল এবং আরো অধিক (১০:২৬)’।
উপরোক্ত কুরআনের আয়াত এবং এই সকল হাদীস সমূহের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত সত্য যে মু’মিনেরা ক্বিয়ামতের দিন এবং জান্নাতে আল্লাহ্কে দেখবে। আর মহান আল্লাহ্র জাত ও সত্তার সাথে সঙ্গতী এবং শোভন এমন ভাবেই আল্লাহ্ জান্নাতীদের সাথে দেখা করবেন। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী এবং মুসনাদে আহমদে)(1)।
২. জান্নাতীদের সাথে আল্লাহর সপ্তাহে দু’বার সাক্ষাৎ: আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় জান্নাতবাসীদের মলত্যাগ ও শ্লেষ্মাত্যাগের প্রয়োজন হবে না এবং তাদের রেতঃস্খলন হবে না। তারা অফুরন্ত নিয়ামতের মধ্যে থাকবে, এমন কি তাদের শরীরের চামড়া থেকে মুক্তার মত মেশক বের হবে, তাদের দরজার সামনে থাকবে মেশকের ঢিবি।
জান্নাতীরা আল্লাহ তা’য়ালার সাথে সপ্তাহে দু’বার সাক্ষাৎ করবে। তারা মুক্তা, চুনি ও পান্নার কাজ করা সোনার কুরসীতে বসবে। তারা আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি দৃষ্টিপাত করবে এবং তিনি তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন। যখন তারা দাঁড়াবে তখন তারা এক কামরা থেকে অপর কামরায় স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। প্রতিটি কামরার থাকবে এমন সত্তরটি করে দরজা, যার প্রতিটি হবে চুনি ও পান্না খচিত। (ইব্নে আবুদ-দুনিয়া মাওকুফরূপে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)(2)।
৩. আল্লাহর পক্ষ্য থেকে জান্নাতীদের জন্য সালাম প্রদান: জাবির ইব্নে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একদা জান্নাতীগণ তাদের নিয়ামত উপভোগে বিভোর থাকবে। এমন সময় তাদের সামনে একটি আলো বিকশিত হবে। তখন তারা তাদের মাথা তুলবে। দেখা যাবে যে, আল্লাহ তা’য়ালা তাদের উপরের দিক থেকে তাদের সমনে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
আত্মপ্রকাশ করে আল্লাহ বলবেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম, হে জান্নাতীরা’। এটাই আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া-তা’য়ালার এই বাণীর মর্মকথা যা আল-কুরআনে সুরা ইয়াসীনে অতি সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে এইভাবে: “(سَلَامٌ قَوْلًا مِّنْ رَّبِّ رَّحِيْمٍ), ‘সালাম’ বলা হবে পরম দয়ালু রব্বের পক্ষ থেকে (৩৬:৫৮)”।
ফলে জান্নাতীরা আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া-তা’য়ালাকে দেখবে এবং এই সময় তারা অন্য সমস্ত নিয়ামতের কোনটির দিকে তারা ফিরেও তাকাবে না; যে পর্যন্ত না তিনি তাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে যান এবং তাদের মধ্যে তাঁর বরকত ও নূর থেকে যায়। (ইব্নে মাজাহ্)।
মু’মিনগণ যেদিন আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া-তা’য়ালার সাথে সাক্ষাত করবে সেদিন তারা আল্লাহকে দেখবে এবং তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে সালাম দিবেন এই মর্মে আল-কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন: “(تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلٰمٌ ۖ وَ أَعَدَّ لَهُمْ أَجْرًا كَرِيْمًا) যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে ‘সালাম। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন উত্তম ও সম্মানজনক প্রতিদান (৩৩:৪৪)”(3)।
৪. জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অবধারিত: আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাতবাসীদেরকে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! উত্তরে তারা বলবে, হে আমাদের রব্ব, আমরা আপনার দরবারে হাজির, আপনার হুকুম পালনে সদাপ্রস্তুত এবং কল্যাণ আপনার হাতেই।
আল্লাহ জান্নাতীরদের জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছে? তারা বলবে, হে আমাদের রব্ব, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদেরকে সেসব নিয়ামত দান করেছেন, যা আপনার কোন মাখলুককে দান করেন নি।
জান্নাতীরা আরও বলবে: হে আল্লাহ, আর এর চাইতে উৎকৃষ্ট আর কীই বা হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন: আমি কি তোমাদেরকে এসবের চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু দান করব? তারা বলবে, এসবের চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কি আছে? তিনি বলবেন, তোমাদের জন্য আমি আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করে দিচ্ছি, সুতরাং আমি এরপর কখনও তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না। (বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী)(4)।
রেফারেন্স:
1. বুখারী শরীফ, ১০/৬৯২৮, ১০/৬৯২৯, ১০/৬৯৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (ইফাবা), পৃষ্ঠা ৫৬২-৫৬৩; মুসলিম শরীফ, ১/৩৪৫, ১/৩৪৬, ইফাবা, পৃষ্ঠা ২৩৬-২৩৭; মুসনাদে আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩০; তিরমিযী শরীফ, ৫/২৫৫৪, ৫/২৫৫৫, ইফাবা, পৃষ্ঠা ৪১-৪২।
2. আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: কিতাবু সিফাতিল জান্নাতী ওয়ান-নার, ৪র্থ খণ্ড, জুন ২০০৫, , ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা-৫৯৮)।
3. আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: কিতাবু সিফাতিল জান্নাতী ওয়ান-নার, ৪র্থ খণ্ড, জুন ২০০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা-৬০১-৬০২)।
4. আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: কিতাবু সিফাতিল জান্নাতী ওয়ান-নার, ৪র্থ খণ্ড, জুন ২০০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা-৬০৭)।
হে আল্লাহ, তুমিই আমাদের একমাত্র রব্ব, তুমিই একমাত্র দানকারী; আমরা তোমারই নিকট চিরস্থায়ী জান্নাতের ফিরদাউসের অফুরুন্ত নিয়ামতসহ তোমার সাক্ষাত কামনা করছি।
মন্তব্যসমূহ