সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জান্নাতী, যারা জান্নাতের প্রবেশ করবে তাদের বৈশিষ্ট্য

জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য হলো তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, বিনয়াবনত, গোপন ও প্রকাশ্যে ব্যয়কারী, তাওবাকারী এবং শেষরাতে ক্ষমাপ্রার্থী; তারা তাকওয়া অবলম্বন করে চলে তারা বলে, “হে আমাদের রব্ব, আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর এবং আমাদিগকে আগুনের  আযাব থেকে রক্ষা কর”। 

জান্নাতীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই যে তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, রসুলের প্রতি ঈমান আনে, রসুলদের প্রতি সম্মান করে, আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করে এবং ভালর দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে, আল্লাহই তাদের পাপ ক্ষমা করবেন এবং দাখিল করাবেন জান্নাতে। 

রাসুলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যখন মু’মিনেরা শ্রবণ করে তখন তারা যে সত্য উপলদ্ধি করেছে তাতে তাদের চক্ষু বিগলিত হয়, তারা বলে, হে আমাদের রব্ব, আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদিগকে সাক্ষ্যবহদের মধ্যে তালিকাভুক্ত কর। 

আমরা আল্লাহ, রাসুল ও আল-কুরআনে ঈমান এনেছি এবং আমরা প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ, তুমি আমাদিগকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত কর; এবং তাদের এই কথার জন্য আল্লাহ তাদের পুরস্কার হিসেবে নির্দিষ্ট করেছেন জান্নাত। 

যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে তারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ, তাদের জন্য তাদের রব্বের সুসংবাদ হলো তাঁর রহমত, সন্তোষ এবং জান্নাতের। 

মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত। নিশ্চয় আল্লাহ ক্রয় করেছেন মু’মিনদের জীবন ও সম্পদ তাঁর জান্নাতের বিনিময়ে। 

ফিরিশতাগণ তাদের নিকট উপস্থিত হবে জান্নাতের প্রত্যেক দ্বার দিয়ে এবং বলা হবে “তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছো বলেই তোমাদের রব্বের অনুমতিক্রমে তোমাদের প্রতি সালাম, কত ভাল তোমাদের পরিণাম; মুত্তাকীদের শুভ পরিণাম হলো জান্নাত।তাদেরকে বলা হবে, “তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে জান্নাতে প্রবেশ কর; মুত্তাকীদের আবাস্থল জান্নাত কত উত্তম”। 

যারা না দেখে রাহমানুর রাহীমকে ভয় করে এবং বিনীত চিত্তে উপস্থিত হয় এমন প্রত্যেক মুত্তাকী আল্লাহভিমুখীর জন্য রয়েছে প্রতিশ্রুত জান্নাত আল্লাহর পক্ষ থেকে; বলা হবে শান্তির সাথে প্রবেশ কর অনন্ত জীবনের জন্য চিরস্থায়ী জান্নাতে, যেখানে রয়েছে নয়ন প্রীতিকর সবকিছু। 

আরো বলা হবে, “হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার রব্বের নিকট ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে, অন্তর্ভুক্ত হও আমার বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে। 

যারা সালাত আদায়কারী, সালাতে যত্নবান, রজনীর সালাতে নিষ্ঠাবান ও সালাতে সদা প্রতিষ্ঠিত এবং সালামের প্রসার ঘটায়; যারা জানে যে তাদের সম্পদে রয়েছে যাচ্ঞাকারী ও বঞ্চিতের নির্ধারিত হক, যারা কর্মফল দিবসকে সত্য বলে জানে, তারাই হবে জান্নাতের সম্মানিত বান্দা। 

আর যারা তাদের রব্বের আযাব সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত, যারা নিজেদের যৌন অংগকে সংযত রাখে এবং যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, আর যারা সাক্ষ্যদানে অটল তারাই হবে জান্নাতের সম্মানিত বান্দা। 

জান্নাতীরাই হবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, এরাই সেই দক্ষিন পার্শ্বস্থ ব্যক্তিগণ যারা জান্নাতে থাকবে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করবে অপরাধীদের সম্পর্কে এবং বলবে, “কিসে তোমাদিগকে সাকার-জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে”। 

এরাই সেইসব মু’মিন-মুত্তাকি ব্যক্তি যারা আহার্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করেছে এবং বলেছে “কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদিগকে আহার্য দান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। 

আমরা আশংকা করি আমাদের রব্বের নিকট হতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের”; পরিনামে আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করবেন জাহান্নাম থেকে এবং ধৈর্যশীলতার পুরস্কারস্বরূপ দান করবেন উদ্যান ও রেশমী বস্ত্র।


রেফারেন্স: আল-কুরআন (সুরা:আয়াত) অবলম্বনে: ২:২৫; ২:৮২; ৩:১৫; ৩:১৬-১৭; ৪:৫৭; ৪:১২২; ৫:১২; ৫:৮৩-৮৫; ৭:৪২; ১১:২৩; ১৩:২২-২৩; ১৯:৬০-৬১; ২৫:৭৫; ৯:২০-২১; ৯:৮৮-৮৯; ৯:১০০-১১১; ১৩:২৩-২৪; ১৪:২৩; ১৫:৪৫-৪৬; ১৬:৩০-৩১; ৫০:৩১-৩৫; ৮৯:২৭-৩০; ৭০:২২-৩৫; ৭৪:৩৯-৪২; ৭৬:৮-১২; ৯৮:৭;

হে আল্লাহ, তুমিই আমাদের একমাত্র রব্ব, তুমিই একমাত্র দানকারী; আমরা তোমারই নিকট চিরস্থায়ী জান্নাতের দারুস সালামের অফুরুন্ত নিয়ামত প্রার্থনা করছি।



মন্তব্যসমূহ