Skip to main content

শবে বরাত ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

 

শবে বরাতের আভিধানিক অর্থ অনুসন্ধান:

শব ফারসি শব্দঅর্থ রাত বা রজনীবরাত শব্দটিও মূলে ফারসিঅর্থ ভাগ্যদু’শব্দের একত্রে অর্থ হবে, ভাগ্য-রজনী

বরাত শব্দটি আরবী ভেবে অনেকেই ভুল করে থাকেনকারণ বরাত বলতে আরবী ভাষায় কোনো শব্দ নেই

যদি বরাত শব্দটি আরবী বারাআত শব্দের অপভ্রংশ ধরা হয় তবে তার অর্থ  হবেসম্পর্কচ্ছেদ বা বিমুক্তিকরণকিন্তু কয়েকটি কারণে এ অর্থটি এখানে অগ্রাহ্য, মেনে নেয়া যায় না-

১. আগের শব্দটি ফারসী হওয়ায় বরাত শব্দটিও ফারসী হবে, এটাই স্বাভাবিক

২. শাবানের মধ্যরজনীকে আরবী ভাষার দীর্ঘ পরম্পরায় কেউই বারা‘আতের রাত্রি হিসাবে আখ্যা দেন নি

৩. রমযান মাসের লাইলাতুল কাদরকে কেউ-কেউ লাইলাতুল বারা‘আত হিসেবে নামকরণ করেছেন, শাবানের মধ্যরজনীকে নয়

আরবী ভাষায় এ রাতটিকে কী বলা হয়?

আরবী ভাষায় এ রাতটিকে লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান- শাবান মাসের মধ্য রজনী হিসেবে অভিহিত করা হয়

শাবানের মধ্যরাত্রির কি কোনো ফযিলত বর্ণিত হয়েছে?

শাবান মাসের মধ্য রাত্রির ফযিলত সম্পর্কে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে:

১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

«فَقَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَخَرَجْتُ، فَإِذَا هُوَ بِالبَقِيعِ، فَقَالَ: أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ مِنْ عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ».

“এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলামতখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোনো স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেনতখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন”

হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮), তিরমিযী তার সুনানে (২/১২১, ১২২) বর্ণনা করে বলেন, ইমাম বুখারীকে এ হাদীসটিকে দুর্বল বলতে শুনেছিঅনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবন মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯) বর্ণনা করেছেনহাদীসটির সনদ দুর্বল বলে সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত

২. আবু মূসা আল আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ».

“আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে আগমন করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন” হাদীসটি ইমাম ইবন মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০) এবং তাবরানী তার মুজামুল কাবীর (২০/১০৭, ১০৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন

আল্লামা বূছীরি বলেন, ইবন মাজাহ বর্ণিত হাদীসটির সনদ দুর্বলতাবরানী বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে আল্লামা হাইসামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মাজমাআয যাওয়ায়েদ (৮/৬৫) গ্রন্থে বলেন, তাবরানী বর্ণিত হাদীসটির সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী শক্তিশালীহাদীসটি ইবন হিব্বানও তার ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেনএ ব্যাপারে দেখুন, মাওয়ারেদুজ জাম্আন, হাদীস নং: ১৯৮০, পৃ: - ৪৮৬

৩. আলী ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا، فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَقُولُ: أَلَا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ أَلَا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلَا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلَا كَذَا أَلَا كَذَا، حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ ».

যখন শাবানের মধ্যরাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর সালাত পড়বে, আর সে দিনের সাওম রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব? রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব? সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব? এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এভাবে বলতে থাকেন

হাদীসটি ইমাম ইবন মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেনআল্লামা বূছীরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার যাওয়ায়েদে ইবন মাজাহ (২/১০) গ্রন্থে বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইবন আবি সুবরাহ রয়েছেন যিনি হাদীস বানাতেনতাই হাদীসটি বানোয়াট

উল্লিখিত আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে, শাবানের মধ্যরাত্রির ফযিলত বিষয়ে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই দুর্বল অথবা  বানোয়াট, আর তাই গ্রাহ্যতারহিত

প্রাজ্ঞ আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, দুর্বল হাদীস দ্বারা কোনো আহকাম- বিধান প্রমাণ করা যায় নাদুর্বল হাদীসের উপর আমল করার জন্য কয়েকটি শর্ত লাগিয়েছেন তারাশর্তগুলো নিম্নরূপ –

১. হাদীসটির মূল বক্তব্য অন্য কোনো সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করবে না, বরং কোনো শুদ্ধ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে

২. হাদীসটি একেবারেই দুর্বল অথবা বানোয়াট হলে চলবে না

৩. হাদীসটির উপর আমল করার সময় এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত বলে বিশ্বাস করা যাবে না কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত বলে বিশ্বাস করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর মিথ্যাচারিতার পাপ হবে, ফলে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে পড়বে

৪. হাদীসটি ফাদায়িল তথা কোনো আমলের ফযিলত বর্ণনা সংক্রান্ত হতে হবেআহকাম (ওয়াজিব, মুস্তাহাব, হারাম, মাকরূহ) ইত্যাদি সাব্যস্তকারী হওয়া যাবে না

৫. বান্দা ও তার প্রভুর মাঝে একান্ত ব্যক্তিগত কোনো আমলের ক্ষেত্রে হাদীসটির নির্ভরতা নেয়া যাবেতবে এ হাদীসের ওপর আমল করার জন্য একে অপরকে আহবান করতে পারবে না

এই শর্তাবলীর আলোকে যদি উপরোক্ত হাদীসগুলো পরীক্ষা করে দেখি তাহলে দেখতে পাই যে, উপরোক্ত হাদীসসমূহের মধ্যে শেষোক্ত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি বানোয়াটসুতরাং তার উপর আমল করা উম্মাতের আলেমদের ঐক্যমতে জায়েয হবে না

প্রথম হাদীসটি দুর্বল, দ্বিতীয় হাদীসটিও অধিকাংশ আলেমের মতে দুর্বল, যদিও কোনো-কোনো আলেম এর বর্ণনাকারীগণকে শক্তিশালী বলে মত প্রকাশ করেছেনকিন্তু কেবলমাত্র বর্ণনাকারী শক্তিশালী হলেই হাদীস বিশুদ্ধ হওয়া সাব্যস্ত হয় না

মোট কথা: প্রথম ও দ্বিতীয়, এ হাদীস দু’টি দুর্বল খুব দুর্বল বা বানোয়াট নয়সে হিসেবে যৎকিঞ্চিৎ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এ রাত্রির ফযিলত রয়েছে

এই সূত্রেই অনেক হাদীসবিদ শাবানের মধ্যরাতের ফযিলত রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন:

ইমাম আহমাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি[ইবন তাইমিয়া তার ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীমে (২/৬২৬) তা উল্লেখ করেছেন]

ইমাম আওযায়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি[ইমাম ইবন রাজাব তার লাতায়েফুল মাআরিফ গ্রন্থে (পৃ: ১৪৪) তার থেকে তা বর্ণনা করেছেন]

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি(ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৬,৬২৭, মাজমু ফাতাওয়া ২৩/১২৩, ১৩১, ১৩৩, ১৩৪)

ইমাম ইবন রাজাব আল হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি(তার লাতায়েফুল মাআরিফ পৃ: ১৪৪ দ্রষ্টব্য)

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ছিলছিলাতুল আহাদীস আস্‌সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯)

উপরোক্ত মুহাদ্দিসগনসহ আরো অনেকে এ রাত্রিকে ফযিলতের রাত বলে মত প্রকাশ করেছেন

কিন্তু আমরা যদি উপরে উল্লিখিত প্রথম ও দ্বিতীয় হাদীসটি পাঠ করে দেখি তাহলে দেখতে পাব আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহবান জানাতে থাকেন- হাদীসদ্বয়ে এ বক্তব্যই উপস্থাপিত হয়েছেমূলতঃ সহীহ হাদীসে সুস্পষ্ট এসেছে যে,

«يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي، فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ».

“আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন- এমন কেউ কি আছে, যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে, যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে; আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৮)

সুতরাং আমরা এ হাদীসদ্বয়ে অতিরিক্ত কোনো কিছুই দেখতে পাচ্ছি নাসুতরাং এ রাত্রির বিশেষ কোনো বিশেষত্ব আমাদের নজরে পড়ছে নাএজন্যই শাইখ আব্দুল আজীজ ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে এ রাত্রির অতিরিক্ত ফযিলত অস্বীকার করেছেন

 

এ রাত্রি উদযাপন ও এতদসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর:

প্রথম প্রশ্ন: এ রাত্রি কী ভাগ্য রজনী?

উত্তর: না, রাত্রি ভাগ্য রজনী নয় মূলতঃ এ রাত্রিকে ভাগ্য রজনী বলার পেছনে কাজ করছে সূরা আদ-দুখানের ৩ ও ৪ আয়াত দু’টির ভুল ব্যাখ্যাতা হলো:

﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ٣ فِيهَا يُفۡرَقُ كُلُّ أَمۡرٍ حَكِيمٍ ٤ ﴾ [الدخان: ٣،  ٤] 

“অবশ্যই আমরা তা (কুরআন) এক মুবারক রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি, অবশ্যই আমরা সতর্ককারী, এ রাত্রিতে যাবতীয় প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয় [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৩-৪]

এ আয়াতদ্বয়ের তাফসীরে অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, এ আয়াত দ্বারা রমযানের লাইলাতুল কদরকেই বুঝানো হয়েছেযে লাইলাতুল কাদরের চারটি নাম রয়েছে: ১. লাইলাতুল কদর, ২. লাইলাতুল বারাআত, ৩. লাইলাতুচ্ছফ, ৪.লাইলাতুল মুবারাকাহশুধুমাত্র ইকরিমা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, এ আয়াত দ্বারা শাবানের মধ্যরাত্রিকে বুঝানো হয়েছেএটা একটি অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা

আল্লামা ইবন কাসীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলোচ্য আয়াতে মুবারক রাত্রি বলতে লাইলাতুল ক্বাদর বুঝানো হয়েছে, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ ﴾ [القدر: ١] .

“আমরা এ কুরআনকে ক্বাদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি [সূরা আল-কাদর, আয়াত: ১]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

﴿ شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ ﴾ [البقرة: ١٨٥]. 

“রমযান এমন একটি মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫]

যিনি এ রাত্রিকে শাবানের মধ্যবর্তী রাত বলে মত প্রকাশ করেছেন, যেমনটি ইকরিমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি অনেক দূরবর্তী মত গ্রহণ করেছেন; কেননা কুরআনের সুস্পষ্ট বাণী তা রমযান মাসে বলে ঘোষণা দিয়েছে(তাফসীরে ইবন কাসীর (৪/১৩৭)

অনুরূপভাবে আল্লামা শাওকানীও এ মত প্রকাশ করেছেন(তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর (৪/৭০৯)

সুতরাং ভাগ্য রজনী হলো লাইলাতুল ক্বাদর যা রমযানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রিগুলো

আর এতে করে এও সাব্যস্ত হলো যে, এ আয়াতের তাফসীরে ইকরিমা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মতভেদ করলেও তিনি শাবানের মধ্য তারিখের রাত্রিকে লাইলাতুল বারাআত নামকরণ করেন নি

দ্বিতীয় প্রশ্ন: শাবানের মধ্যরাত্রি উদযাপন করা যাবে কিনা?

উত্তর: শাবানের মধ্যরাত্রি পালন করার কী হুকুম এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে তিনটি মত রয়েছে:

এক. শাবানের মধ্য রাত্রিতে মাসজিদে জামাতের সাথে সালাত ও অন্যান্য ইবাদত করা জায়েযপ্রসিদ্ধ তাবেয়ী খালেদ ইবন মিদান, লুকমান ইবন আমের সুন্দর পোশাক পরে, আতর-খুশবু, সুরমা মেখে মাসজিদে গিয়ে মানুষদের নিয়ে এ রাত্রিতে সালাত আদায় করতেনএ মতটি ইমাম ইসহাক ইবন রাহওয়ীয়াহ থেকেও বর্ণিত হয়েছে(লাতায়েফুল মাআরেফ পৃ:- ১৪৪)

তারা তাদের মতের পক্ষে কোনো দলীল পেশ করেন নিআল্লামা ইবন রাজাব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাদের মতের পক্ষে দলীল হিসাবে বলেনঃ তাদের কাছে এ ব্যাপারে ইসরাইলি তথা পূর্ববর্তী উম্মাতদের থেকে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছিল, সে অনুসারে তারা আমল করেছিলেনতবে পূর্বে বর্ণিত বিভিন্ন দুর্বল হাদীস তাদের দলীল হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকবে

দুই. শাবানের মধ্যরাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত বন্দেগী করা জায়েযইমাম আওযায়ী, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া এবং আল্লামা ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম এ মত পোষণ করেন

যে সমস্ত হাদীস দ্বারা এ রাত্রির ফযিলত বর্ণিত হয়েছে সে সমস্ত সাধারণ হাদীসের উপর ভিত্তি করে তারা তাদের মতের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করাকে জায়েয মনে করেন

তিন. এ ধরনের ইবাদত সম্পূর্ণরূপে বিদআত- চাই তা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সামষ্টিকভাবেইমাম আতা ইবন আবি রাবাহ, ইবন আবি মুলাইকা, মদীনার ফুকাহাগণ, ইমাম মালেকের ছাত্রগণ ও অন্যান্য আরো অনেকেই এ মত পোষণ করেছেন এমনকি ইমাম আওযায়ী যিনি শাম তথা সিরিয়াবাসীদের ইমাম বলে প্রসিদ্ধ তিনিও এ ধরনের ঘটা করে মাসজিদে ইবাদত পালন করাকে বিদআত বলে ঘোষণা করেছেন

তাদের মতের পক্ষে যুক্তি হলো:

১. এ রাত্রির ফযিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো দলীল নেইরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাত্রিতে কোনো সুনির্দিষ্ট ইবাদত করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়নিঅনুরূপভাবে তার কোনো সাহাবী থেকেও কিছু বর্ণিত হয়নিতাবেয়ীনদের মধ্যে তিনজন ব্যতীত আর কারো থেকে বর্ণিত হয়নি

আল্লামা ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শাবানের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তার সাহাবাদের থেকে কোনো সালাত পড়া প্রমাণিত হয়নিযদিও শামদেশীয় সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো তাবেয়ীন থেকে তা বর্ণিত হয়েছে(লাতায়েফুল মাআরিফ : ১৪৫)

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ রাত্রির ফযিলত বর্ণনায় কিছু দুর্বল হাদীস এসেছে যার উপর ভিত্তি করা জায়েয নেই, আর এ রাত্রিতে সালাত আদায়ে বর্ণিত যাবতীয় হাদীসই বানোয়াট, আলেমগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন

২. হাফেজ ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যিনি কোনো কোনো তাবেয়ীনদের থেকে এ রাত্রির ফযিলত রয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ঐ সমস্ত তাবেয়ীনদের কাছে দলীল হলো যে তাদের কাছে এ ব্যাপারে ইসরাইলি কিছু বর্ণনা এসেছে

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যারা এ রাত পালন করেছেন তাদের দলীল হলো যে তাদের কাছে ইসরাইলি বর্ণনা এসেছে, আমাদের প্রশ্ন: ইসরাইলি বর্ণনা এ উম্মাতের জন্য কিভাবে দলীল হতে পারে?

৩. যে সমস্ত তাবেয়ী থেকে এ রাত উদযাপনের সংবাদ এসেছে তাদের সমসাময়িক প্রখ্যাত ফুকাহা ও মুহাদ্দিসীনগণ তাদের এ সব কর্মকান্ডের নিন্দা করেছেনযারা তাদের নিন্দা করেছেন তাদের মধ্যে প্রখ্যাত হলেন- ইমাম আতা ইবন আবি রাবাহ, যিনি তার যুগের সর্বশ্রেষ্ট মুফতি ছিলেন, আর যার সম্পর্কে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছিলেন, তোমরা আমার কাছে প্রশ্নের জন্য একত্রিত হও, অথচ তোমাদের কাছে ইবন আবি রাবাহ রয়েছে

সুতরাং যদি ঐ রাত্রি উদযাপনকারীদের পক্ষে কোনো দলীল থাকত, তাহলে তারা আতা ইবন আবি রাবাহর বিপক্ষে তা অবশ্যই পেশ করে তাদের কর্মকাণ্ডের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন, অথচ এরকম করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি

৪. পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যে সমস্ত দুর্বল হাদীসে ঐ রাত্রির ফযিলত বর্ণিত হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র সে রাত্রিতে আল্লাহর অবতীর্ণ হওয়া এবং ক্ষমা করা প্রমাণিত হয়েছে, এর বাইরে কিছুই বর্ণিত হয়নিমূলতঃ এ অবতীর্ণ হওয়া ও ক্ষমা চাওয়ার আহবান প্রতি রাতেই আল্লাহ তাআলা করে থাকেনযা সুনির্দিষ্ট কোনো রাত বা রাতসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়

এর বাইরে দুর্বল হাদীসেও অতিরিক্ত কোনো ইবাদত করার নির্দেশ নেই

৫. আর যারা এ রাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে আমল করা জায়েয বলে মন্তব্য করেছেন তাদের মতের পক্ষে কোনো দলীল নেই কেননা এ রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বা তার সাহাবা কারো থেকেই ব্যক্তিগত কিংবা সামষ্টিক কোনো ভাবেই কোনো প্রকার ইবাদত করেছেন বলে বর্ণিত হয়নি

এর বিপরীতে শরীয়তের সাধারণ অনেক দলীল এ রাত্রিকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে, তম্মধ্যে রয়েছে:

আল্লাহ বলেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ ﴾ [المائ‍دة: ٣] 

আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ».

“যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাবে যা এর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭)

তিনি আরো বলেছেন,

«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ».

“যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করবে যার উপর আমাদের দ্বীনের মধ্যে কোনো নির্দেশ নেই তা অগ্রহণযোগ্য”(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮)

শাইখ আব্দুল আজীজ ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আর ইমাম আওযায়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যে এ রাতে ব্যক্তিগত ইবাদত করা ভাল মনে করেছেন, আর যা হাফেয ইবন রাজাব পছন্দ করেছেন, তাদের এ মত অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বরং দুর্বল; কেননা কোনো কিছু যতক্ষণ পর্যন্ত না শরীয়তের দলীলের মাধ্যমে জায়েয বলে সাব্যস্ত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুসলিমের পক্ষেই দ্বীনের মধ্যে তার অনুপ্রবেশ ঘটানো বৈধ হবে নাচাই তা ব্যক্তিগতভাবে করুক বা সামষ্টিক- দলবদ্ধভাবেচাই গোপনে করুক বা প্রকাশ্যেকারণ বিদআতকর্ম অস্বীকার করে এবং তা থেকে সাবধান করে যে সমস্ত প্রমাণাদি এসেছে সেগুলো সাধারণভাবে তার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে(আত্‌তাহযীর মিনাল বিদআ: ১৩)

৬. শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا تَخْتَصُّوا لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي، وَلَا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الْأَيَّامِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي صَوْمٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ».

তোমরা জুমআর রাত্রিকে অন্যান্য রাত থেকে ক্বিয়াম/ সালাতের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, আর জুমআর দিনকেও অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা করে সাওমের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, তবে যদি কারো সাওমের দিনে সে দিন ঘটনাচক্রে এসে যায় সেটা ভিন্ন কথা(মুসলিম, হাদীস নং: ১১৪৪, ১৪৮)যদি কোনো রাতকে ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো তবে অবশ্যই জুমআর রাতকে ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো; কেননা জুমআর দিনের ফযিলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে,

«خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ ».

সূর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয় তম্মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন, জুমু‘আর দিন (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৪)সুতরাং যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর দিনকে বিশেষভাবে ক্বিয়াম/ সালাতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা থেকে নিষেধ করেছেন সেহেতু অন্যান্য রাতগুলোকে অবশ্যই ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নেয়া জায়েয হবে নাতবে যদি কোনো রাত্রের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো দলীল এসে যায় সেটা ভিন্ন কথাআর যেহেতু লাইলাতুল ক্বাদর এবং রমযানের রাতের ক্বিয়াম/ সালাত পড়া জায়েয সেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রাতগুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীস এসেছে

তৃতীয় প্রশ্ন: শাবানের মধ্যরাত্রিতে হাজারী সালাত পড়ার কী হুকুম?

উত্তরঃ শাবানের মধ্যরাত্রিতে একশত রাকাত সালাতের প্রতি রাকাতে দশবার সূরা কুলহু ওয়াল্লাহ (সূরা ইখলাস) দিয়ে সালাত পড়ার যে নিয়ম প্রচলিত হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে বিদআত

এ সালাতের প্রথম প্রচলন:

এ সালাতের প্রথম প্রচলন হয় হিজরী ৪৪৮ সনেফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের ইবন আবিল হামরা নামীয় একলোক বায়তুল মুকাদ্দাস আসেনতার তিলাওয়াত ছিল সুমধুরতিনি শাবানের মধ্যরাত্রিতে নামাযে দাঁড়ালে তার পিছনে এক লোক এসে দাঁড়ায়, তারপর তার সাথে তৃতীয় জন এসে যোগ দেয়, তারপর চতুর্থ জনতিনি সালাত শেষ করার আগেই বিরাট একদল লোক এসে তার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে

পরবর্তী বছর এলে, তার সাথে অনেকেই যোগ দেয় ও সালাত আদায় করেএতে করে মাসজিদুল আক্‌সাতে এ সালাতের প্রথা চালু হয়কালক্রমে এ সালাত এমনভাবে আদায় হতে লাগে যে অনেকেই তা সুন্নাত মনে করতে শুরু করে(ত্বারতুসী, হাওয়াদেস ও বিদআ পৃ: ১২১, ১২২, ইবন কাসীর, বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৪/২৪৭, ইবনুল কাইয়েম, আল-মানারুল মুনিফ পৃ: ৯৯)

এ সালাতের পদ্ধতি:

প্রথা অনুযায়ী এ সালাতের পদ্ধতি হলো, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস দশবার করে পড়ে মোট একশত রাকাত সালাত পড়াযাতে করে সূরা ইখলাস ১০০০ বার পড়া হয়(এহইয়ায়ে উলুমুদ্দীন ১/২০৩)

এ ধরনের সালাত সম্পূর্ণ বিদআতকারণ এ ধরনের সালাতের বর্ণনা কোনো হাদীসের কিতাবে আসেনিকোনো কোনো বইয়ে এ সম্পর্কে যে সকল হাদীস উল্লেখ করা হয় সেগুলো কোনো হাদীসের কিতাবে আসেনিআর তাই আল্লামা ইবনুল জাওযী (মাওদুআত ১/১২৭-১৩০), হাফেয ইরাকী (তাখরীজুল এহইয়া), ইমাম নববী (আল-মাজমু ৪/৫৬), আল্লামা আবু শামাহ (আল-বায়স পৃ: ৩২-৩৬), শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা, (ইকতিদায়ে ছিরাতুল মুস্তাকীম ২/৬২৮), আল্লামা ইবন আররাক (তানযীহুশ শরীয়াহ ২/৯২), ইবন হাজার আল-আসকালানী, আল্লামা সূয়ূতী (আল-আমর বিল ইত্তেবা পৃ: ৮১, আল-লাআলিল মাসনূআ ২/৫৭), আল্লামা শাওকানী (ফাওয়ায়েদুল মাজমুআ পৃ: ৫১) সহ আরো অনেকেই এগুলোকে বানোয়াট হাদীসবলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন

এ ধরনের সালাতের হুকুম:

সঠিক জ্ঞানের অধিকারী আলেমগণের মতে এ ধরণের সালাত বিদআত; কেননা এ ধরনের সালাত আল্লাহর রাসূল পড়েননি, তার কোনো খলীফাও পড়েননি এবং সাহাবীগণও পড়েননিআয়িম্মায়ে হুদা তথা আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ, সাওরী, আওযায়ী, লাইসসহ অন্যান্যগণ কেউই এ ধরনের সালাত পড়েননি বা পড়তে বলেননি

আর এ ধরনের সালাতের বর্ণনায় যেই হাদীসসমূহ কেউ কেউ উল্লেখ করে থাকেন তা উম্মাতের আলেমদের ইজমা অনুযায়ী বানোয়াট(এর জন্য দেখুন: ইবন তাইমিয়ার মাজমু‘ল ফাতাওয়া ২৩/১৩১, ১৩৩, ১৩৪, ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৮, আবু শামাহ: আল-বায়েছ পৃ: ৩২-৩৬, রশীদ রিদা: ফাতাওয়া ১/২৮, আলী মাহফুজ, ইবদাপৃ: ২৮৬, ২৮৮, ইবন বায: আত্‌তাহযীর মিনাল বিদআ পৃ: ১১-১৬)

চতুর্থ প্রশ্ন: শাবানের মধ্যরাত্রির পরদিন কী সাওম রাখা যাবে?

উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শাবান মাসে সবচেয়ে বেশী সাওম রাখতেন(এর জন্য দেখুন: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, ১৯৭০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬, ১১৬১, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩১, সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২০৭৭, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৬৫৭)

সে হিসাবে যদি কেউ শাবান মাসে সাওম রাখেন তবে তা হবে সুন্নাতশাবান মাসের শেষ দিন ছাড়া বাকী যে কোনো দিন সাওম রাখা জায়েয বা সাওয়াবের কাজতবে সাওম রাখার সময় মনে করতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু শাবান মাসে সাওম পালন করেছিলেন তাকে অনুসরণ করে সাওম রাখা হচ্ছে

অথবা যদি কারও আইয়ামে বিদের নফল সাওম তথা মাসের ১৩, ১৪, ১৫ এ তিনদিন সাওম রাখার নিয়ম থাকে তিনিও সাওম রাখতে পারেনকিন্তু শুধুমাত্র শাবানের পনের তারিখ সাওম রাখা বিদআত হবেকারণ শরীয়তে এ সাওমের কোনো ভিত্তি নেই

আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পরিপূর্ণ পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার তাওফিক দিনআমীন!

টীকা: যদি শাবানের মধ্যরাত্রিকে উদযাপন করা বা ঘটা করে পালন করা জায়েয হতো তাহলে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আমাদের জানাতেনবা তিনি নিজেই তা করতেনআর যদি এমন কিছু তিনি করে থাকতেন তাহলে সাহাবাগণ অবশ্যই তা উম্মাতের কাছে বর্ণনা করতেনতারা নবীদের পরে জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষ, সবচেয়ে বেশী নসীহতকারী, কোনো কিছুই তারা গোপন করেন নি (আত্‌তহযীর মিনাল বিদা ১৫, ১৬)

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে কুরআন, হাদীস ও গ্রহণযোগ্য আলেমদের বাণী থেকে আমরা জানতে পারলাম শাবানের মধ্য রাত্রিকে ঘটা করে উদযাপন করা চাই তা সালাতের মাধ্যমে হোক অথবা অন্য কোনো ইবাদতের মাধ্যমে অধিকাংশ আলেমদের মতে জঘন্যতম বিদআতশরীয়তে যার কোনো ভিত্তি নেইবরং তা সাহাবাদের যুগের পরে প্রথম শুরু হয়েছিলযারা সত্যের অনুসরণ করতে চায় তাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা করতে বলেছেন তাই যথেষ্ট


Writer : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

Comments

Popular posts from this blog

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য

  একগুচ্ছ মুক্তাদানা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি; তাঁর নিকট তাওবা করি; আর আমাদের নফসের সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই । আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই । আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল; তাঁর প্রতি অনেক সালাত (দরূদ) ও সালাম। অতঃপর: নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত দ্বীনে ইসলাম সকল ধর্ম ও জীবনব্যবস্থার চেয়ে পরিপূর্ণ, সর্বোত্তম ও সর্বমহান দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা। আর এই দ্বীনটি এমন সার্বিক সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতা, যথার্থতা, সম্প্রীতি, ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সার্বিক পরিপূর্ণতা এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ব্যাপকতার সাক্ষ্য বহন করে; আর তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এই সাক্ষ্য বহন করে যে, তিনি সত্যিকা

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য - 2

ঈমানের পরে ইসলামের বড় বড় বিধানসমূহ হল: সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন করা এবং সম্মানিত ঘরের হজ করা সে সম্পর্কে  শরীয়তের এই মহান বিধানসমূহ ও তার বিরাট উপকারিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। এই বিধিবিধানের দাবিস্বরূপ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা ও এর প্রতিদানস্বরূপ ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা নিয়েও চিন্তা করুন। ০ সালাতের মধ্যে যা আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন । এতে রয়েছে আল্লাহর জন্য ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা, তার প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ, প্রশংসা, দো‘আ ও প্রার্থনা, বিনয়। ঈমানের বৃক্ষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব বাগিচার ক্ষেত্রে পানি সেচ দেয়ার মতোই । দিনে ও রাতে যদি বার বার সালাতের ব্যবস্থা না থাকত , তবে ঈমান-বৃক্ষ শুকিয়ে যেত এবং তার কাঠ বিবর্ণ হয়ে যেত; কিন্তু সালাতের বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে ঈমান-বৃক্ষ বৃদ্ধি পায় এবং নতুনত্ব লাভ করে। এছাড়াও সালাতের অন্তর্ভুক্ত নানা বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করুন; যেমন: আল্লাহর যিকির ও স্মরণে মগ্ন থাকা— যা সব কিছুর চেয়ে মহান ও শ্রেষ্ঠ। কিংবা এ দিকে চিন্তা করুন: সালাত সকল প্রকার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। ০ এবার যা

জান্নাত হল একটি চিরস্থায়ী আবাসস্থল

যারা ঈমান আনে, আমলে সালিহা করে এবং সৎকর্মপরায়ণশীল, রব্বের প্রতি বিনয়াবনত, রব্বের ভয়ে ভীত, তারাই হলো আসহাবুল জান্নাত- জান্নাতের অধিবাসী, তারাই দাখিল হবে জান্নাতে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের রব্বের রহমত, সন্তোষ, সমুচ্চ মর্যাদা, জান্নাতে উত্তম সুউচ্চ প্রাসাদ, উন্নত কক্ষ ও নিরাপদ বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি।  তারাই হবে জান্নাতের উত্তম পবিত্র অধিবাসী, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে আছে তাদের জন্য চির সবুজ উদ্যান ও স্থায়ী সুখ-শান্তি, সেখানে নাই কোন ক্লেশ, নাই কোন ক্লান্তি, এটি হবে তাদের জন্য এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। থাকবে অপরিমিত জীবনোপকরণ, তারা যা কিছু কামনা করবে তাই পাবে, আর তা হবে তাদের রব্বের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ আপ্যায়ন। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেথায় আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না।  জান্নাতের দ্বার তাদের জন্য হবে উন্মুক্ত, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী, থাকবে সেথায় বহুবিধ ফলমূল ও পানীয়, আনতনয়না সমবয়স্কাগণ, অপরিমিত রিযিক, আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে জান্নাত হবে কত উৎকৃষ্ট! মুত্তাকীদের জন্য ইহাই মহাসাফল্য। যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের নির্ধারিত রিযিক ফলমূল, সেখানে তাদেরকে সম্মানিত

সূরা আল আলার ফজিলত

হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এই সূরা “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” কে ভালবাসতেন। (আহমদ) ব্যাখ্যা: হুজুর (সা.) সূরা আলাকে এই জন্য ভালবাসতেন যে, ঐ সূরার মধ্যে এই আয়াত রয়েছে: ” ইন্না- হাযা লাফিসসুহুফিল উলা- সুহুফি ইব্রাহীমা ওয়া মুসা-” আয়াতের অর্থ: এই সূরার সব বিষয়বস্ত অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (অর্থাৎ পরকাল উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী সহিফা সমূহেও লিখিত আছে। অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও মুসা (আ.) এর সহীফা সমূহের থেকে কোরআনুল কারীমের সত্যতা প্রমাণ, এবং ইহুদি ও খৃষ্টানদের ভ্রান্ত মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইব্রাহীমী সহিফার বিষয়বস্ত: হযরত আবু জর গিফারী (রা.) রাসূল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, ইব্রাহীম (আ.) এর সহীফা কীরূপ ছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এসব সহিফায় শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছিল। তন্মধ্যে এক দৃষ্টান্তে অত্যাচারী বাদশাকে সম্বোধন করা বলা হয়েছে “হে ভুঁইফোড় গর্বিত বাদশাহ!  আমি তোমাকে ধনেশ্বর স্তুপীকৃত করার জন্য রাজত্ব দান করিনি। বরং আমি তোমাকে এই জন্য শাসন ক্ষমতা অর্পণ করেছি, যাতে তুমি উৎপীড়িত বদদোয়া আমার পর্যন্ত পৌছতে না দাও। কেননা, আমার আইন এই যে, আমি উৎপীড়িত দোয়

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য - পর্ব-১

আল্লাহ তা ‘ আলা স্বীয় বান্দাদের জলে-স্থলে, শরীরে ও দিগন্ত জুড়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নি‘আমতরাজি দ্বারা আবৃত করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ﴿ أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗ ﴾ [لقمان: ٢٠] “তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা ‘ আলা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ?” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০] অন্যত্র বলেন , ﴿ وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤ ﴾ [ابراهيم: ٣٤] “যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি-ই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। আফসোস! মানুষ সীমাহীন অন্যায়পরায়ণ, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৪] ﴿ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨ ﴾ [النحل: ١٨] “যদি আল্লাহর নি ‘ আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ ক

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

  আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আল্লাহ তা আ লা তার বান্দাদেরকে অঢেল অনুকম্পায় ঢেকে রেখেছেন। জলে-স্থলে, তাদের শরীর ও পরিপার্শ্বে তথা সমগ্র পৃথিবীতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অসংখ্য নেয়ামত ছড়িয়ে দিয়েছেন তদের কল্যাণে। এরশাদ হয়েছে,   ألم تروا أن الله سخر لكم ما في السموات وما في الأرض وأسبغ عليكم نعمه ظاهرة وباطن ة  .  سورة لقمان: 20 তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা আ লা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন , তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ন ি য়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।   [সূরা লুকমান:২০] আরো  ই রশাদ হয়েছে -   وآتاكم من كل ما سألتموه وإن تعدوا نعمة الله لا تحصوها إن الإنسان لظلوم كفار .  سورة إبراهيم: 34 যা তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত হিসেব করে দেখ, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। [সূরা ইব্রাহীম :৩৪ তবে বান্দার উপর সবচেয়ে বড় ন ি য়ামত, নবী-রসূল প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ ন ি য়ামতের দাবি হল -আল্লাহ তায়ালার প্রাপ্য হক-অধিকার বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন ও যথাযথভাবে তা প্রয়ো