Skip to main content

আল্লাহ তা‘আলার হক বা প্রাপ্য - পর্ব-১



আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের জলে-স্থলে, শরীরে ও দিগন্ত জুড়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নি‘আমতরাজি দ্বারা আবৃত করে রেখেছেন। তিনি বলেন,

﴿أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗ﴾ [لقمان: ٢٠]

“তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তাআলা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি‘আমতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন ?” [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০] অন্যত্র বলেন,

﴿وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤﴾ [ابراهيم: ٣٤]

“যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি-ই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। আফসোস! মানুষ সীমাহীন অন্যায়পরায়ণ, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৪]

﴿وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٨﴾ [النحل: ١٨]

“যদি আল্লাহর নিআমত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১৮]

তবে বান্দার ওপর সবচেয়ে বড় নিআমত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ জন্য বান্দা হিসেবে আমাদের ওপর ওয়াজিব আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য অধিকার বা হকসমূহ জানা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবশ্যকীয় ও বাধ্যতামূলক হকসমূহ আদায়ের প্রতি যত্নবান থাকা। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হক তথা অধিকারের বিবরণ তুলে ধরা হলো:

প্রথম অধিকার: আল্লাহ তাআলার ওপর ঈমান আনা

আল্লাহ তাআলার ওপর ঈমান চারটি জিনিস অন্তর্ভুক্ত করে:

এক: আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বের ঈমান বা বিশ্বাস: আল্লাহ তাআলার মাখলুকাত তথা সৃষ্টি জগত দেখে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। যেহেতু স্রষ্টা ছাড়া কোনো সৃষ্টি নিজেকে নিজে সৃষ্টি করতে কিংবা অস্তিত্বে আনতে পারে না; কারণ, প্রত্যেক জিনিসই তার অস্তিত্বের পূর্বে বিলুপ্ত, অবিদ্যমান ও অস্তিত্বহীন থাকে, বিধায় সৃষ্টি করার প্রশ্নই আসে না। আবার কোনো জিনিস হঠাৎ বা আকস্মিকভাবে অস্তিত্বে বা দৃশ্যপটে চলে আসবে তাও সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিটি ঘটমান বস্তু বা সম্পাদিত কাজের নেপথ্যে সংঘটক বা সম্পাদনকারী থাকা জরুরী।

অতএব, যখন আমরা জানতে পারলাম এ বিশ্বজগত নিজে-নিজেই দৃশ্যপটে চলে আসে নি, আবার অকস্মাৎ তৈরি হয়েও যায় নি, তাই আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার হয়ে গেল, এর একজন স্রষ্টা রয়েছেন। আর তিনি হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।

দুই: রুবুবিয়্যাতের ঈমান: আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাতের ওপর ঈমান রাখা; অর্থাৎ সৃষ্টি তার, মালিকানা তার, পরিচালনার দায়িত্ব তার, তিনি ছাড়া কেউ মালিক নয়, কেউ পরিচালনাকারী নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [الاعراف: ٥٤]

“শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ করা।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

আরো বলেন,

﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ﴾ [فاطر: ١٣]

“তিনিই আল্লাহ! তোমাদের রব, সাম্রাজ্য তাঁরই। তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ১৩]

দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কাউকে পাওয়া যায় নি যে, অন্তরের সাক্ষ্য, প্রাকৃতিক বাস্তবতার প্রতি দৃষ্টিপাত করে আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করেছে। তবে এমন অনেকেই আছে, যারা জেদ ধরে অহংকারবশত, নিজের কথায় আস্থা না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাত অস্বীকার করেছে। যেমন, ফির‘আউন তার সম্প্রদায়কে বলেছিল:

﴿أَنَا۠ رَبُّكُمُ ٱلۡأَعۡلَىٰ﴾ [النازعات: ٢٤]

“আমিই তোমাদের বড় রর।” [সূরা আন-নাযি‘আত, আয়াত: ২৪] অন্য জায়গায় বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَأُ مَا عَلِمۡتُ لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرِي﴾ [القصص: ٣٨]

“হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে আমি ব্যতীত তোমাদের কোনো উপাস্য আছে কি-না।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৩৮] ফির‘আউন নিজের ওপর আস্থা কিংবা বিশ্বাস রেখে এ কথা বলে নি। কারণ, আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন,

﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗا﴾ [النمل: ١٤]

“তারা অহংকার করে নিদর্শনাবলী প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪] মূসা আলাইহিস সালাম ফির‘আউনকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,

﴿لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ بَصَآئِرَ وَإِنِّي لَأَظُنُّكَ يَٰفِرۡعَوۡنُ مَثۡبُورٗا﴾ [الاسراء: ١٠٢]

“তুমি অবশ্যই জান যে, আসমান ও জমিনের রবই এসব নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ নাযিল করেছেন। হে ফিরআউন, আমার ধারণা তুমি ধ্বংস হতে চলেছ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]

এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে মুশরিকরা আল্লাহ তাআলার الألوهية ‘উলুহিয়্যাতে’ শরীক করেও الربوبية ‘রুবুবিয়্যাতে’-কে স্বীকার করতো। আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿قُل لِّمَنِ ٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهَآ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٤ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٨٥ قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلسَّبۡعِ وَرَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ ٨٦ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٨٧ قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٨ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ ٨٩﴾ [المؤمنون: ٨٤،  ٨٩]

“বলুন, পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল। এখন তারা বলবে: সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা করো না? বলুন: সপ্ত আকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে? এখন তারা বলবে আল্লাহ। বলুন, তবুও কি তোমরা ভয় করবে না ? বলুন, তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না। এখন তারা বলবে আল্লাহর। বলুন, তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে?” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৭৯-৮৪] অন্যত্র বলা হচ্ছে:

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡعَلِيمُ ٩﴾ [الزخرف: ٩]

“(হে নবী) আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন: কে নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ।” [সূরা আয-যুখরূপ, আয়াত: ৯] আরো বলা হচ্ছে:

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٨٧﴾ [الزخرف: ٨٧]

“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে ? তবে অবশ্যই তারা বলবে আল্লাহ।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮৭]

তিন: আল্লাহ তাআলার উলুহিয়্যাতের ওপর ঈমান: অর্থাৎ ‘আল্লাহ সুবহানাহু ও তাআলাই একমাত্র উপাস্য’ এ কথার ওপর ঈমান রাখা। যথা তিনি সত্যিকারার্থে প্রভূ। বিনয় ও মহব্বত সম্বলিত ইবাদতের উপযুক্ত। তিনি ছাড়া কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٣﴾ [البقرة: ١٦٣]

“আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনিই কেবল পরম করুণাময় দয়ালু।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৩] আরো বলেন,

﴿ءَأَرۡبَابٞ مُّتَفَرِّقُونَ خَيۡرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلۡوَٰحِدُ ٱلۡقَهَّارُ ٣٩ مَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسۡمَآءٗ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ﴾ [يوسف: ٣٩،  ٤٠]

“ভিন্ন ভিন্ন অনেক রব ভালো, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছ। আল্লাহ এদের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি।” [সূরা ইউসূফ, আয়াত: ৩৯-৪০]

আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত জিনিসগুলোর প্রভূত্ব কিছু যুক্তির মাধ্যমে খণ্ডন করেছেন:

১. মুশরিকরা যে সমস্ত বস্তুকে প্রভূ বানিয়েছিল, তাদের ভিতর প্রভূত্বের কোনো গুণ বিদ্যমান নেই। এগুলো সৃষ্টি করতে পারে না, কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না এবং তাদেরকে অনিষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে না। এরা তাদের জীবন-মৃত্যুর মালিক নয়। আসমান-যমীনের মাঝে কোনো জিনিসের মালিক নয় এবং এতে তাদের অংশীদারিত্বও নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةٗ لَّا يَخۡلُقُونَ شَيۡ‍ٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ وَلَا يَمۡلِكُونَ لِأَنفُسِهِمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗا وَلَا يَمۡلِكُونَ مَوۡتٗا وَلَا حَيَوٰةٗ وَلَا نُشُورٗا ٣﴾ [الفرقان: ٣]

“তারা তার পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট, নিজেদের ভালোও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না। জীবন, মরণ এবং পুনরুজ্জীবনেরও মালিক নয় তারা।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৩] তিনি আরো বলেন,

﴿أَيُشۡرِكُونَ مَا لَا يَخۡلُقُ شَيۡ‍ٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ١٩١ وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ لَهُمۡ نَصۡرٗا وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٢﴾ [الاعراف: ١٩١،  ١٩٢]

“তারা কি এমন কাউকে শরীক সাব্যস্ত করে যে একটি বস্তুও সৃষ্টি করে নি বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আর তারা না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজের সাহায্য করতে পারে!” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯১-১৯২]

তাদের বানানো প্রভূদের এমন অসহায়ত্ব ও দুরবস্থা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে এগুলোকে প্রভূ বানানো নিরেট বোকামি, চরম বাতুলতা।

২. মুশরিকরা বিশ্বাস করতো -আল্লাহ তাআলাই প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, তার হাতেই সমস্ত জিনিসের মালিকানা, তিনি রক্ষা করেন, তার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না। আল-কুরআনে বলা হচ্ছে:

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٨٧﴾ [الزخرف: ٨٧]

“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তাহলে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮৭] আরো বলা হচ্ছে:

﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١﴾ [يونس: ٣١]

“তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুজি দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও জমিন থেকে কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন? এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম-সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! তুমি বল, তারপরেও তাকওয়া অবলম্বন করছ না?” [সূরা ইউনূস, আয়াত: ৩১]

তারা যখন নিজেরাই এর সাক্ষ্য প্রদান করল, যুক্তির ভিত্তিতে এখন তাদের অবশ্য কর্তব্য একমাত্র প্রভূ, একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা। ধারণাপ্রসূত ঐ সমস্ত প্রভূদের নয় -যারা নিজেদের কোনো উপকার করতে পারে না। নিজেদের থেকে কোনো বিপদ হটাতে জানে না।

চার: আল্লাহ তাআলার নাম ও সিফাতের ওপর ঈমান: বান্দা হিসেবে আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনবে। যে সমস্ত নাম ও সিফাত (বিশেষ্য ও বিশেষণ) আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাব অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাদীসে উল্লেখ করেছেন, সেগুলোকে আল্লাহ তাআলার নাম ও সিফাত হিসেবে আল্লাহ তাআলার শানের সাথে উপযুক্ত মতে বিশ্বাস করবে, একমাত্র তার জন্য প্রযোজ্য বলে জ্ঞান করবে। কোনো ধরনের অপব্যাখ্যা, নিষ্কর্মকরণ, আকৃতি প্রদান ও সামঞ্জস্য বিধান করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠﴾ [الاعراف: ١٨٠]

আর আল্লাহর রয়েছে উত্তম নামসমূহ, কাজেই সে নাম ধরেই তাকে আহ্বান কর। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তার নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮০] অন্যত্র বলেন,

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [الشورا: ١١]

“কোনো কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, দেখেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

দ্বিতীয় অধিকার: পরিপূর্ণ ইখলাস ও আন্তরিকতাসহ একমাত্র আল্লাহর ইবাদত উৎসর্গ করা

এর পদ্ধতি হলো, বান্দা তার আমলের মাধ্যমে একমাত্র তাআলার সন্তুষ্টি কামনা করবে। যেমন, আল্লাহ তাআলা এর প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন:

﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢﴾ [الزمر: ٢]

“আমি আপনার ওপর এ কিতাব যথার্থ-ই নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করুন।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২] আরো বলেন,

﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣﴾ [الانعام: ١٦٢،  ١٦٣]

“আপনি বলুন: আমার সালাত, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন-মরণ বিশ্ব প্রতিপালকের জন্য। তার কোনো অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্য পোষণকারী।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬২-১৬৩] সহীহ হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন,

أنا أغنى الشركاء عن الشرك، من عمل عملا أشرك فيه غيري فهو للذي أشرك به وأنا منه برىء.

“আমি সমস্ত অংশীদারদের ভিতর বেশি অমুখাপেক্ষী, যে এমন আমল করল, যার ভিতর সে আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করেছে, সে আমল ঐ অংশীদারের জন্য, আমি তার থেকে মুক্ত।”

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহুআনহু বলেন, আমি একটি গাধার পিঠে রাসূলের সঙ্গী ছিলাম। যে উটকে ‘উফাইর’ বলা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন:

«يا معاذ هل تدري حق الله على عباده، وما حق العباد على الله؟ قلت: الله ورسوله أعلم،قال: فإن حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئا، وحق العباد على الله أن لايعذب من لايشرك به شيئا فقلت : يارسول الله، أفلا أبشر الناس؟ قال لاتبشرهم فيتكلوا».

“হে মু‘আয, তুমি কি জান বান্দার ওপর আল্লাহ তাআলার কি কি হক রয়েছে? এবং আল্লাহ তাআলার ওপর বান্দার কী কী হক রয়েছে? আমি উত্তর দিলাম: আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো জানেন। তিনি বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহ তাআলার হক হচ্ছে: তারা তাঁর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না। আল্লাহ তাআলার ওপর বান্দার হক হচ্ছে, যে তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, তাকে তিনি শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি কি সকলকে এর সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন তাদের সুসংবাদ দিও না, তাহলে তারা কর্মহীন হয়ে যাবে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«إن الله لا ينظر إلى أجسامكم، ولا إلى صوركم، ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم، وقال: إذا جمع الله الناس يوم القيامة ليوم لا ريب فيه، نادى مناد من كان أشرك فى عمله لله أحدا فليطلب ثوابه من عند غير الله، فإن الله أغنى الشركاء عن الشرك».

“আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর ও চেহারার দিকে তাকান না। তবে তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: কিয়ামতের দিবসে (যে দিবসের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই) যখন আল্লাহ তাআলা সকল মানুষকে জমা করবেন, একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবে, যে ব্যক্তি তার আমলের ভিতর অন্য কাউকে শরীক করেছে, সে যেন তার সাওয়াব আল্লাহ তাআলা ছাড়া যাকে শরীক করেছে তার কাছ থেকে চেয়ে নেয়। কারণ, আল্লাহ তাআলা সমস্ত শরীকদের থেকে অমুখাপেক্ষী।” [হাদীসটি ইমাম তিরমিযী রহ. বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাসান গরীব]

একজন বান্দা হিসেবে সকলের জন্য জরুরি -ইবাদত বিষয়ে আন্তরিকতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা এবং সেভাবে আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য আদায় করা, এর বিপরীত অর্থাৎ শির্ক থেকে বিরত থাকা।

Comments

Popular posts from this blog

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য

  একগুচ্ছ মুক্তাদানা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি; তাঁর নিকট তাওবা করি; আর আমাদের নফসের সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই । আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই । আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল; তাঁর প্রতি অনেক সালাত (দরূদ) ও সালাম। অতঃপর: নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত দ্বীনে ইসলাম সকল ধর্ম ও জীবনব্যবস্থার চেয়ে পরিপূর্ণ, সর্বোত্তম ও সর্বমহান দ্বীন ও জীবনব্যবস্থা। আর এই দ্বীনটি এমন সার্বিক সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতা, যথার্থতা, সম্প্রীতি, ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সার্বিক পরিপূর্ণতা এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ব্যাপকতার সাক্ষ্য বহন করে; আর তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এই সাক্ষ্য বহন করে যে, তিনি সত্যিকা

দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য - 2

ঈমানের পরে ইসলামের বড় বড় বিধানসমূহ হল: সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন করা এবং সম্মানিত ঘরের হজ করা সে সম্পর্কে  শরীয়তের এই মহান বিধানসমূহ ও তার বিরাট উপকারিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। এই বিধিবিধানের দাবিস্বরূপ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা ও এর প্রতিদানস্বরূপ ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা নিয়েও চিন্তা করুন। ০ সালাতের মধ্যে যা আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন । এতে রয়েছে আল্লাহর জন্য ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা, তার প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ, প্রশংসা, দো‘আ ও প্রার্থনা, বিনয়। ঈমানের বৃক্ষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব বাগিচার ক্ষেত্রে পানি সেচ দেয়ার মতোই । দিনে ও রাতে যদি বার বার সালাতের ব্যবস্থা না থাকত , তবে ঈমান-বৃক্ষ শুকিয়ে যেত এবং তার কাঠ বিবর্ণ হয়ে যেত; কিন্তু সালাতের বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে ঈমান-বৃক্ষ বৃদ্ধি পায় এবং নতুনত্ব লাভ করে। এছাড়াও সালাতের অন্তর্ভুক্ত নানা বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করুন; যেমন: আল্লাহর যিকির ও স্মরণে মগ্ন থাকা— যা সব কিছুর চেয়ে মহান ও শ্রেষ্ঠ। কিংবা এ দিকে চিন্তা করুন: সালাত সকল প্রকার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। ০ এবার যা

জান্নাত হল একটি চিরস্থায়ী আবাসস্থল

যারা ঈমান আনে, আমলে সালিহা করে এবং সৎকর্মপরায়ণশীল, রব্বের প্রতি বিনয়াবনত, রব্বের ভয়ে ভীত, তারাই হলো আসহাবুল জান্নাত- জান্নাতের অধিবাসী, তারাই দাখিল হবে জান্নাতে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের রব্বের রহমত, সন্তোষ, সমুচ্চ মর্যাদা, জান্নাতে উত্তম সুউচ্চ প্রাসাদ, উন্নত কক্ষ ও নিরাপদ বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি।  তারাই হবে জান্নাতের উত্তম পবিত্র অধিবাসী, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে আছে তাদের জন্য চির সবুজ উদ্যান ও স্থায়ী সুখ-শান্তি, সেখানে নাই কোন ক্লেশ, নাই কোন ক্লান্তি, এটি হবে তাদের জন্য এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। থাকবে অপরিমিত জীবনোপকরণ, তারা যা কিছু কামনা করবে তাই পাবে, আর তা হবে তাদের রব্বের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ আপ্যায়ন। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেথায় আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না।  জান্নাতের দ্বার তাদের জন্য হবে উন্মুক্ত, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী, থাকবে সেথায় বহুবিধ ফলমূল ও পানীয়, আনতনয়না সমবয়স্কাগণ, অপরিমিত রিযিক, আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে জান্নাত হবে কত উৎকৃষ্ট! মুত্তাকীদের জন্য ইহাই মহাসাফল্য। যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের নির্ধারিত রিযিক ফলমূল, সেখানে তাদেরকে সম্মানিত

সূরা আল আলার ফজিলত

হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এই সূরা “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” কে ভালবাসতেন। (আহমদ) ব্যাখ্যা: হুজুর (সা.) সূরা আলাকে এই জন্য ভালবাসতেন যে, ঐ সূরার মধ্যে এই আয়াত রয়েছে: ” ইন্না- হাযা লাফিসসুহুফিল উলা- সুহুফি ইব্রাহীমা ওয়া মুসা-” আয়াতের অর্থ: এই সূরার সব বিষয়বস্ত অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (অর্থাৎ পরকাল উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী সহিফা সমূহেও লিখিত আছে। অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও মুসা (আ.) এর সহীফা সমূহের থেকে কোরআনুল কারীমের সত্যতা প্রমাণ, এবং ইহুদি ও খৃষ্টানদের ভ্রান্ত মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইব্রাহীমী সহিফার বিষয়বস্ত: হযরত আবু জর গিফারী (রা.) রাসূল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, ইব্রাহীম (আ.) এর সহীফা কীরূপ ছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এসব সহিফায় শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছিল। তন্মধ্যে এক দৃষ্টান্তে অত্যাচারী বাদশাকে সম্বোধন করা বলা হয়েছে “হে ভুঁইফোড় গর্বিত বাদশাহ!  আমি তোমাকে ধনেশ্বর স্তুপীকৃত করার জন্য রাজত্ব দান করিনি। বরং আমি তোমাকে এই জন্য শাসন ক্ষমতা অর্পণ করেছি, যাতে তুমি উৎপীড়িত বদদোয়া আমার পর্যন্ত পৌছতে না দাও। কেননা, আমার আইন এই যে, আমি উৎপীড়িত দোয়

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

  আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আল্লাহ তা আ লা তার বান্দাদেরকে অঢেল অনুকম্পায় ঢেকে রেখেছেন। জলে-স্থলে, তাদের শরীর ও পরিপার্শ্বে তথা সমগ্র পৃথিবীতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অসংখ্য নেয়ামত ছড়িয়ে দিয়েছেন তদের কল্যাণে। এরশাদ হয়েছে,   ألم تروا أن الله سخر لكم ما في السموات وما في الأرض وأسبغ عليكم نعمه ظاهرة وباطن ة  .  سورة لقمان: 20 তোমরা কি দেখ না আল্লাহ তা আ লা নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন , তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ন ি য়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।   [সূরা লুকমান:২০] আরো  ই রশাদ হয়েছে -   وآتاكم من كل ما سألتموه وإن تعدوا نعمة الله لا تحصوها إن الإنسان لظلوم كفار .  سورة إبراهيم: 34 যা তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত হিসেব করে দেখ, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। [সূরা ইব্রাহীম :৩৪ তবে বান্দার উপর সবচেয়ে বড় ন ি য়ামত, নবী-রসূল প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ ন ি য়ামতের দাবি হল -আল্লাহ তায়ালার প্রাপ্য হক-অধিকার বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন ও যথাযথভাবে তা প্রয়ো