ঈমানের পরে ইসলামের বড় বড় বিধানসমূহ হল: সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন করা এবং সম্মানিত ঘরের হজ করা সে সম্পর্কে শরীয়তের এই মহান বিধানসমূহ ও তার বিরাট উপকারিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। এই বিধিবিধানের দাবিস্বরূপ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা ও এর প্রতিদানস্বরূপ ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা নিয়েও চিন্তা করুন।
০ সালাতের
মধ্যে যা আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন। এতে রয়েছে
আল্লাহর জন্য ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা, তার প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ, প্রশংসা, দো‘আ ও প্রার্থনা,
বিনয়। ঈমানের বৃক্ষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব বাগিচার ক্ষেত্রে পানি সেচ দেয়ার মতোই। দিনে ও
রাতে যদি বার বার সালাতের ব্যবস্থা না থাকত, তবে ঈমান-বৃক্ষ
শুকিয়ে যেত এবং তার কাঠ বিবর্ণ হয়ে যেত; কিন্তু সালাতের বিভিন্ন ইবাদাতের কারণে ঈমান-বৃক্ষ
বৃদ্ধি পায় এবং নতুনত্ব লাভ করে।
এছাড়াও সালাতের অন্তর্ভুক্ত নানা বিষয়ের
প্রতি লক্ষ্য করুন; যেমন: আল্লাহর যিকির ও স্মরণে মগ্ন থাকা— যা সব কিছুর চেয়ে
মহান ও শ্রেষ্ঠ। কিংবা এ দিকে চিন্তা করুন: সালাত সকল প্রকার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ
থেকে বিরত রাখে।
০ এবার যাকাতের
তাৎপর্যের প্রতি লক্ষ্য করুন এবং লক্ষ্য করুন এর মধ্যে সম্মানজনক চরিত্রকে স্বভাব
হিসেবে গ্রহণের যে ব্যাপার রয়েছে সেই দিকে; যেমন: দানশীলতা, উদারতা, কৃপণতার
স্বভাব থেকে দূরে থাকা, আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দান করেছেন, সে জন্য তাঁর কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করা এবং ধন-সম্পদকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা থেকে হেফাযত করা। এছাড়াও
যাকাতে যা আরও রয়েছে, তা হল: সৃষ্টির প্রতি ইহসান তথা
সদ্ব্যবহার করা, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা এবং যাকাতের প্রতি মুখাপেক্ষীদের সব কল্যাণকর
প্রয়োজন পূর্ণ করা।
যাকাতে রয়েছে অভাবগ্রস্তদের অভাব পূরণের
ব্যবস্থা; রয়েছে জিহাদ ও মুসলিমদের প্রয়োজনীয় সার্বিক কল্যাণকর কাজের জন্য
সহযোগিতা; রয়েছে দারিদ্র্য ও দরিদ্রের কশাঘাত প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা; রয়েছে
আল্লাহর বিনিময়ের প্রতি আস্থা, তাঁর প্রতিদানের প্রত্যাশা ও তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন।
০ আর সাওম
(রোযা) পালনের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর ভালবাসা ও নৈকট্য লাভের আশায় ব্যক্তির মন
কর্তৃক তার প্রিয়বস্তু ত্যাগের অনুশীলন এবং মনকে প্রচণ্ড ইচ্ছা ও ধৈর্যশক্তি
সম্পন্ন হওয়ার অভ্যস্ত করা।
আর তাতে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা শক্তিশালী হয়
এবং নফসের ভালবাসার উপরে তাঁর (আল্লাহ্র) ভালবাসা বাস্তবায়ন হয়।
আর এই জন্যই সাওম একান্তভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে, তিনি সকল আমলের মধ্য থেকে এটিকে
নিজের জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে নিয়েছেন।
০ আর হজের
মধ্যে যেসব বিষয় রয়েছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: সম্পদ ব্যয় করা, কষ্ট সহ্য করা
এবং আর তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য কাজের উদ্যোগ
গ্রহণ করা; তাঁর নিকট হাজির হওয়া; তাঁর ঘরে ও আঙ্গিনায় তাঁর নিকট অনুনয়-বিনয় করা
এবং বিভিন্ন প্রকার আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর দাসত্ব করা এমনসব পবিত্র
স্থানসমূহে, যেগুলো আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দা ও তাঁর ঘরের মেহমানদের জন্য দস্তরখানরূপে
সম্প্রসারিত করেছেন।
আর এতে রয়েছে আল্লাহর প্রতি সম্মান ও
পরিপূর্ণ বিনয় প্রদর্শন; নবী-রাসূল ও আল্লাহর একনিষ্ঠ ও পরিশুদ্ধ বান্দাদের অবস্থা
স্মরণ এবং তাদের প্রতি ঈমানকে সুদৃঢ়করণ ও তাঁদের ভালবাসাকে গাঢ় করে তোলা।
আর তার মধ্যে আরও রয়েছে: মুসলিম সম্প্রদায়ের
পারস্পরিক পরিচিতি; তাদের মধ্যে ঐক্য গঠনের চেষ্টাসাধনা এবং তাদের বিশেষ ও সাধারণ
স্বার্থের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করা। এছাড়াও এর বহু সৌন্দর্য রয়েছে
যা গণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। সুতরাং হজ হচ্ছে দ্বীনের অন্যতম মহান সৌন্দর্যপূর্ণ
বিষয় এবং মুমিনদের অর্জিত বড় ধরনের উপকারী বস্তু। এ বিষয়ে এটি একটি সংক্ষিপ্ত
মনোযোগ আকর্ষণ।
মন্তব্যসমূহ